শূন্যে ভাসে মানুষ

একটি রহস্যময় স্থান। যেখানে গেলে কেউই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। এমনকি সেখানে ভেসে থাকাও সম্ভব। আপনি যদি সোজা হয়েও দাঁড়াতে চান তবুও আপনি বাঁকা হয়েই যাবেন। এ যেন পৃথিবীতেই মহাকর্ষণের অভিজ্ঞতা।

ভাবছেন ভুতুড়ে কোনো স্থানের কথা বলছি? মোটেও না। এই স্থানটিতে মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কম। এজন্যই সেখানকার সব বস্তু শূন্যে ভাসে এমনকি মানুষও। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্টা ক্রুজের রেডউড জঙ্গলে গেলেই এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীণ হওয়া যায়। স্থানটির নাম দেয়া হয়েছে মিস্ট্রি স্পট।

সেখানকার ১৫০ ফিট বা ৪৬ মিটার জুড়েই এমন অনুভূতির উদ্রেগ ঘটায়। অসম্ভব সুন্দর রেডউড জঙ্গলে এই বিস্ময়কর স্থানটি প্রথম আবিষ্কার করেন জর্জ প্রথার ১৯৩৯ সালে। তিনি ছিলেন একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান, মেকানিক এবং উদ্ভাবক। তিনি সান্তা ক্রুজ এলাকাতেই ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এবার তবে জেনে নিন মিস্ট্রি স্পটের খোঁজ তিনি কীভাবে পেলেন?

একদিন রেডউড জঙ্গল দিয়ে তিনি হাঁটছিলেন। হঠাৎই লক্ষ্য করলেন তার কম্পাসটি ভিন্নভাবে কাজ করছে। অলৌকিক এই দশা দেখে তিনি তাতক্ষণিকভাবে ভয় পেলেও কৌতূহলতা বেড়ে যায়। অতঃপর তিনি বেশ কিছুদিন জায়গাটি নজরে রাখলেন।

 দেখলেন একই রকমভাবে ওই নির্দিষ্ট স্থানটিতে গেলেই কম্পাসের কাটার পরিবর্তন ঘটে। এরপর প্রথার রেডউড জঙ্গলেরই ওই স্থানটুকু কিনে নেন। সেখানেই একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। এই বাড়িটি দেখলেই মনে হবে এটি যেন মুহূর্তেই ভাসবে। অনেকটা বাঁকা আকৃতির এই বাড়িটি দেখতেও বেশ অদ্ভূত।

এরপর ১৯৪০ সালের দিকে তিনি বাড়িটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। মজার বিষয় হলো, এই বাড়িতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো মোটেও সম্ভব নয়। চাইলে যে কোনো অ্যাঙ্গেল অর্থাৎ বাঁকা হয়ে দাঁড়ানো যাবে। ধরুন, আপনি যদি সোজা হয়ে ঝুলতে চেষ্টা করেন কখনোই তা পারবেন না। কারণ ততক্ষণাৎই আপনি বাঁকা হয়ে যাবেন।

এই স্থানটিতে পানি উপর থেকে নিচে প্রবাহিত হয় না বরং নিচ থেকে উপরের দিকে প্রবাহিত হয়। গোলাকার কোনো বলকে যদি উপর থেকে নিচের দিকে গড়িয়ে দেন, সেটি উপরের দিকে চলতে থাকে। এ বাড়িতে একটি চেয়ার রাখা আছে, দেয়ালের যে কোনো স্থানে রেখে চেয়ারে বসতে পারেন। এমনকি একটি পাথরও ঘরের মধ্যে শূন্যে ভেসে বেড়ায়।

আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী এ জায়গা নিয়ে গবেষণা করেন। আমরা মূলত জানি, মধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর সব জায়গায় কাজ করে। কথাটি আসলে ঠিক নয়। মধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর অনেক স্থানেই কাজ করে না বা কম কাজ করে। এজন্যই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। বিরল এই বাড়িতে এসে মহাশূন্যের অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ