দিল্লিতে সহিংসতা: প্রাণহানি বেড়ে ৪০

দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে।বৃহস্পতিবার স্থানীয় নর্দমায় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) এক কর্মকর্তার লাশ খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে মঙ্গলবার রাতের পর বড় ধরনের সহিংসতার কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় শুক্রবার ১০ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা শিথিল করা হতে পারে।

বৃহস্পতিবার শেষ রাতের দিকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া এলাকায় ৭০ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গত ৩৬ ঘণ্টায় বড় ধরনের কোনও সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

খবরে বলা হয়েছে, সহিংসতার ঘটনায় দিল্লি পুলিশ ৪৮টি এফআইআর দায়ের করে। আটক করা হয়েছে ৪ শতাধিক মানুষকে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩০ জনকে।

বুধবার গভীর রাতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুর, মৌজপুর কারায়াল নগরে নতুন করে সহিংসতা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেও দিল্লিতে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন সকালে শিববিহার এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন একজন। সংঘর্ষে আহত আরও ২-৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি দোকান ও একটি মোটরসাইকেলে সকাল ৭টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর।

বৃহস্পতিবার নর্দমা থেকে এক আইবি কর্মকর্তা অঙ্কিক শর্মার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। এই কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে দিল্লির ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টির কাউন্সিলর তাহির হোসেন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।

সহিংসতার ঘটনার তদন্তে ২টি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাতে তুলে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছেন, রাজ্য সরকার সহিংসতায় আহত সবার চিকিৎসার খবর বহন করবে। এমনকি তারা যদি বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এছাড়া নিহতদের স্বজনদের ১০ লাখ রুপি এবং যাদের বাড়ি-ঘর ও দোকান হারিয়েছেন তাদেরকে ৫ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

ত্রাণ ও পুনর্বাসন অভিযান তদারকিতে ১৮জন সাবডিভিশনার ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ঘিরে বিক্ষোভ নিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিমবিদ্বেষী ঘৃণাবাদী বক্তব্য দেন বিজেপি নেতারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথসহ বহু নেতা ঘৃণাবাদী বক্তব্য দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার সহিংসতায় উসকানি ছড়ান দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। এরপরই দিল্লির পূর্ব অংশে শুরু হয় নজিরবিহীন সহিংসতা।

উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে সময় চেয়েছে নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, যথা সময়ে এফআইআর দায়ের করা হবে। এজন্য আদালতে বাড়তি সময়ের আবেদন জানান সলিসিটর জেনারেল। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্র সরকারকে ৪ সপ্তাহ সময় দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ