ত্রাণ কার্যক্রমের আড়ালে এক দশকে ৬০ হাজার ধর্ষণ!
জাতিসংঘের কর্মীরা উদ্ধার, সহায়তা বা ত্রাণ কার্যক্রমের আড়ালে ৬০ হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বজুড়ে সংস্থাটির কর্মীদের যৌন হয়রানির ঘটনার কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এক গোপন তথ্যদাতার এমন অভিযোগের নথি গত বছর ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ব্রিটিশ সরকারের অনুদানদাতা সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) সচিবের কাছে জমা দিয়েছেন জাতিসংঘের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু ম্যাকলেয়ড।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ম্যাসেলিওড বলেন, জাতিসংঘের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের মাত্রা ক্যাথলিক গির্জাগুলোর বিশালত্বের মতোই। এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘সারা বিশ্বে হাজার হাজার ত্রাণকর্মী কাজ করছেন যারা আদতে শিশু নিপীড়ক। আপনি যদি ইউনিসেফের টি-শার্ট পরা থাকেন, তবে কেউ আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে না আপনার উদ্দেশ্য কি? ম্যাসেলিওড বলেন, ‘তখন আপনি যা খুশি করতে পারবেন। আর এ বিষয়টি সারা পৃথিবীতেই ঘটছে। এটা আসলে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। অনেক আগেই এটা বন্ধ করা উচিত ছিল।
অ্যান্ড্রু ম্যাকলেয়ড বলেন, বিশ্বজুড়ে ১০ হাজার সহায়তাকর্মী রয়েছে, যারা শিশু ধর্ষণের মানসিকতাকে পুষে চলেছে। আর অবস্থান এমন দাঁড়িয়েছে, আপনি ইউনিসেফের টি-শার্ট গায়ে জড়ালে আর কেউ আপনাকে কিছু বলতেই পারবে না। আপনি যা-ই করেন, রক্ষে পেয়ে যাবেন। বিশ্বের এইড ইন্ডিাস্ট্রিতে এটি যেন ব্যাধি আকার ধারণ করেছে। পুরো প্রক্রিয়ায় গলদ, এটার সুরাহা হওয়া উচিত ছিল আরও বহু বছর আগেই।
২০১৬ সালের ১২ মাসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক কর্মীরা ৩১১ জনকে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ জমা হয় জাতিসংঘে। গত বছর তা স্বীকারও করে নেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতিয়েরেস।
সেই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে কড়া সমালোচনার পর এবার ৬০ হাজার ধর্ষণের অভিযোগ সামনে এলো। অ্যান্ড্রু বলেন, কেবল এনজিও নয়, ক্যাথোলিক চার্চের মধ্যেও এমন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। শিশু ধর্ষণ এবং যৌন হেনস্থা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে। এই পাপাচার- মারাত্মকঅপরাধ এখনই থামানো উচিত।
নথিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের ছাতার তলায় থাকা বিভিন্ন সংস্থায় অন্তত ৩ হাজার ৩০০ শিশু ধর্ষক লুকিয়ে রয়েছে। ভালো মানুষের মুখোশ পরে তারা এই জঘন্য অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে বছরের পর বছর। শিশুরাই মূলত তাদের যৌন লালসার শিকার।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, হাজারো যৌন নিপীড়ক সংকটাপন্ন নারী ও শিশুদের কাছে পেতে দাতব্য কার্যক্রমগুলোকে ব্যবহার করছে। আর এক্ষেত্রে অপরাধ চেপে রাখার রোগ দেখা যাচ্ছে দুই দশক ধরে। যারাই এ ধরনের অপরাধের তথ্য প্রকাশ করতে চেয়েছে, তাদেরই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ম্যাসেলিওডের সরবরাহকৃত প্রমাণের ভিত্তিতে সাবেক মন্ত্রী প্রিতি পাটেল ডিএফআইডি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, তারা তথ্য গোপন করতে চেয়েছিল। তারা পাটেলকে বলেছিলেন যেন যৌন নিপীড়ন নিয়ে এমন বক্তব্য দেওয়া হয়, যেখানে মনে হবে শুধু জাতিসংঘের সেনারাই এর সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, এটা খুবই রূঢ় সত্য যে যুক্তরাজ্যের জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়েই এই শিশু ধর্ষণের মতো অপরাধে অর্থায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি জানি জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ে এটা নিয়ে অনেক আলোচনা চলেছে। কিন্তু এটা নিয়ে অবশ্যই কিছু করতে হবে। এখনও কার্যকর কিছুই হয়নি। এই অধ্যাপক বলেন, আমরা এমন এক সমস্যা নিয়ে কথা বলছি, যার বিশালতা প্রায় ক্যাথলিক গির্জার সমান।