মৌলভীবাজারে দুর্লভ সাপখেকো শঙ্খিনী উদ্ধার

 

মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলার উত্তর তিলকপুর থেকে সাপখেকো বিষধর শঙ্খিনী সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রামটির দিপু বাবুর ঘরের বারান্দা থেকে উদ্ধারকৃত সাপটি শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বিকেলের দিকে অবমুক্ত করা হবে।

বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লোকজনকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, উত্তর তিলকপুর গ্রামের দিপু বাবুর বাড়িতে একটি বিষধর সাপ পাওয়া গেছে। লোকজনের উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে সাপটি তাদের ঘরের বারান্দায় কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে।

পরে বন বিভাগ সজলকে সঙ্গে নিয়ে রাতেই উত্তর তিলকপুর গ্রামে উপস্থিত হয়ে শঙ্খিনীটিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র, তাজুল ইসলামসহ অনেকে।

সাপটি বর্তমানে জানকিছড়া রেইস কিউ সেন্টারে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, শঙ্খিনী সাপ (Banded Krait) শাখামুটি, সানি সাপ (খুলনা অঞ্চলে), দুইমাথা সাপ ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তবে সাপের দুটি মাথা রয়েছে এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সাপটি লেজের অংশ ভোঁতা হওয়ায় সেটিকেও মাথা বলে ভুল করেন অনেকে।

সাপটির শরীর হলুদ বর্ণের, তার মাঝে কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। মাথার ওপর ইংরেজি ‘ভি’ বর্ণের মতো একটি চিহ্ন দেখা যায়। পূর্ণবয়স্ক শঙ্খিনী লম্বায় ৬ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এটি বিষধর ও এর বিষ নিউরোটক্সিন প্রকৃতির। ফলে সাপটির বিষ স্নায়ুতন্ত্র অকেজো করে দেয়।

তিনি বলেন, শঙ্খিনী বাংলাদেশের আবাসিক ও নিশাচর সাপ। নিশাচর সরীসৃপ যেমন কেউটে, গোখরো, কালাচসহ ইত্যাদি বিষধর সাপ এদের প্রিয় খাদ্য। এ কারণে যে এলাকায় শঙ্খিনী সাপ থাকে সে এলাকায় সাধারণত অন্য সাপ থাকে না।

এরা ইঁদুরের গর্ত, পুরনো ইটের স্তূপ, উইয়ের ঢিবি এবং পাহাড়ি জলাধারের আশেপাশে বাস করে। এক সময় সারাদেশে শঙ্খিনী সাপ দেখা গেলেও বর্তমানে সিলেট চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে মাঝে মাঝে সাপটি দেখা যায়। সাধারণত এপ্রিল মাসে শঙ্খিনী সাপ ৪ থেকে ১৪টি ডিম দেয় এবং ৬১ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) রেড লিস্ট গ্রন্থে সাপটিকে বিপন্ন ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী এই সাপটি সংরক্ষিত। তাই এটি আটক, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ