ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ হারালেন বিধবা

খাদ্যসামগ্রী নিতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন রোকেয়া বেগম (৫২) নামের এক বিধবা মহিলা। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এমন ঘটনা ঘটেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভিড়ের চাপে পড়ে ওই বিধবার মৃত্যু হয়েছে। যদিও তৎক্ষণাৎ মরদেহ নিয়ে যাওয়া তার দুই ছেলের বক্তব্য, তাদের মা আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। কীভাবে তিনি মারা গেলেন, তা তারা বলতে পারছেন না।

রোববার (৩ মে) বিকেল সাড়ে ৩টায় পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার হাজী আসমত প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক হাজার ৪০০ জনের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে এ ঘটনা ঘটে।

রোকেয়ার স্বামীর নাম মৃত অহেদ আলী। তিনি ভৈরব শহরের পলতাকান্দা এলাকায় থাকতেন। ভৈরব পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওলাদ হোসেন তার অনুসারীদের নিয়ে এলাকার কর্মহীন ও দরিদ্রদের মধ্যে ওই খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছিলেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, কাউন্সিলর মো. আওলাদ হোসেন করোনাভাইরাসের সংকটের কথা বলে স্থানীয় বিত্তবান লোকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। এ টাকায় এলাকার অসহায় কর্মহীন লোকদের খাদ্যসামগ্রী দেয়ার ব্যবস্থা করেন বিকেলে। এ সামগ্রী নিতে প্রায় দেড় হাজার লোকের সমাগম ঘটে। সরকারের নির্দেশিত সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার সময় লোকজন হুড়োহুড়ি শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের অভিযোগ, এই হুড়োহুড়ির সময় রোকেয়া বেগম ভিড়ের চাপে পড়ে মারা যান।

তবে বিধবার ছেলে আল আমিন ও ইয়ামিন বলেন, মা আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। ঘটনার সময় কীভাবে মারা গেলেন তা আমরা বলতে পারছি না। এখন পুলিশে অভিযোগ করে আর কী হবে।

এ ব্যাপারে কাউন্সিলর আওলাদ হোসেন বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে অসহায় কর্মহীন মানুষকে বাঁচাতে গিয়েই আমি বিত্তবানদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা আদায় করি। আজ ১৪০০ লোকের মধ্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। প্রত্যেককে আট কেজি চাল, তিন কেজি আলু ও দুই কেজি ডাল দেয়া হয়। ঘটনার সময় রোকেয়া বেগম মাথা ঘুরে পড়ে যান। এই নারী আগেই অসুস্থ ছিলেন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রোকেয়া বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলেও দাবি করেন আওলাদ হোসেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর আওলাদের বড় ভাই মির্জা সুলাইমান বলেন, প্রায় সাত লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী আজ বিতরণ করা হয়। ওই নারীর মৃত্যুর খবরে আমি মর্মাহত। মানুষের উপকার করতে গিয়ে এখন আমাদের বদনাম হয়ে গেল।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. সুমাইয়া জানান, রোকেয়া বেগমকে কয়েকজন লোক হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি আগেই মারা গেছেন। ঠিক কী কারণে মারা গেছেন সেটা আমি বলতে পারবো না। কারণ তার লাশ পরিবারের সদস্যরা তৎক্ষণাৎ নিয়ে গেছেন।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. শাহিন বলেন, দেড় হাজার মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হলো, কিন্তু পুলিশকে তারা অবহিত করলো না। খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কথা আমি জানতাম না। কী কারণে সেই নারী মারা গেলেন, তা আমি জানি না। তবে তার পরিবারের কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লুবনা ফারজানা বলেন, করোনার দুঃসময়ে ওই নারীর মৃত্যু দুঃখজনক। এলাকার কাউন্সিলর আমাকে বলেছিলেন আজ অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবেন। তবে এতো লোকের সমাগমের কথা আমাকে বলা হয়নি। -জাগো নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ