ইঁদুরের ওপর গবেষণায় দেখা গেলো মানসিক চাপেও সাদা হয় চুল!
চুল পাকার কারণ যে শুধু বাড়তি বয়স এমনটা নয়, বরং মানসিক চাপের ফলেও মাথাভর্তি কালো চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মানসিক চাপের ফলে চুল পেকে যাওয়ার কারণ খুঁজে পেয়েছেন একদল বিজ্ঞানী।
সাও পাওলো এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক চুল পাকার রহস্য উদ্ধারে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান। সাধারণত ত্রিশের পর প্রাকৃতিকভাবেই মানুষের চুলে হালকা পাতলা সাদা রঙ ধরে। কিন্তু অল্প বয়সে চুল পাকার ক্ষেত্রে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বা মানসিক চাপের প্রভাব কেমন সেটি পরিষ্কার ছিল না।
ইঁদুরের ওপর গবেষণায় দেখা যায়, ইঁদুরকে ব্যথা দিলে ত্বক ও চুলের রঙ নিয়ন্ত্রণকারী স্টেমসেল নষ্ট হয়ে যায়। শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসল হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে। হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বেড়ে যায়, স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এতে চুল বা লোমের রঞ্জক গুটিকায় থাকা স্টেম সেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব স্টেম সেল ম্যালানিন তৈরি করে। ফলে কুচকুচে কালো ইঁদুরগুলো কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়।
গবেষকদের বিশ্বাস, চুল পাকার সঙ্গে ম্যালানোসাইট স্টেম সেলের সম্পর্ক রয়েছে। এ স্টেম সেল থেকে উৎপাদিত হয় চুল ও ত্বকের রঙ নির্ধারণকারী রঞ্জক ম্যালানিন। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষার ফলাফলে দেখে তারা প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে যান। তারা দেখেন, মানসিক চাপের সময় অতিমাত্রায় হরমোন নিঃসরণই অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রফেসর ইয়া চিয়ে সু বলেন, আমরা এখন নিশ্চিতভাবে জানি ত্বক এবং চুলের এই নির্দিষ্ট পরিবর্তনের জন্য মানসিক চাপ দায়ী। এটিও জানি কীভাবে তা কাজ করে।
তিনি আরো বলেন, মানসিক চাপ শুধু শরীরের জন্য খারাপ তা নয়। এই চাপে রঞ্জক পুনরুৎপাদনকারী স্টেম সেল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং চুল একবার পাকলে যতই চেষ্টা করা হোক চুল পাকা আর বন্ধ হবে না।
একই গবেষণার অন্য পরীক্ষণে ব্যথা দেয়ার সময় ইঁদুরগলোকে অ্যান্টি হাইপারটেনসিভ ওষুধ দেয়া হয়। এ ধরনের ওষুধ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। দেখা যায় একই ধরনের চাপে থাকা এসব ইঁদুরের লোম সাদা হচ্ছে না।
তবে ড. সু বলেন, ইঁদুরের ওপর করা পরীক্ষালব্ধ আবিষ্কার এখনই মানুষের ওপর প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। মানুষের চুল পাকা রোধে ব্যবস্থা নিতে তাদের আরো বিস্তারিত ও গভীর গবেষণার দরকার আছে।