করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০৬

করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১০৬ পেরিয়েছে। রাতারাতি দেশটিতে আরো ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চীনে মহামারী আকারে ধারণ করা করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরো প্রায় ১৩০০ জন।

মঙ্গলবার চীনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।

চীনের হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কমিশন এক বিবৃতিতে জানায়, মহামারি আকার ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে আরো ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ১২৯১ জন। ফলে গোটা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে।

এদিকে চীনের সীমান্ত পেরিয়ে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে এই ভয়াবহ ভাইরাসটি। সর্বশেষ সিঙ্গাপুর ও জার্মানিতেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগীর খবর মিলেছে। এর আগে থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও জাপানে এই ভাইরাসে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই ৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সোমবার জানা গেছে।

এই ভাইরাসের বিস্তার রুখতে হুবেই প্রদেশকে চারদিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে চীনা সরকার। এখানে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সেখানকার ৫ কোটির মতো মানুষ। এই প্রদেশের উহান শহর থেকেই গোটা চীনে ছড়িয়ে পড়েছে রহস্যময় ভাইরাসটি।

করোনাভাইরসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে এর আগে গত বৃহস্পতিবার -হুয়াংগ্যাং, শিয়ানতাও ও ইজাউসহ আরো চারটি শহর বন্ধ ঘোষণা করে চীনা কর্তৃপক্ষ। এ ঘোষণার ফলে গত কয়েকদিনে চীনের কমপক্ষে ১০টি শহর কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই শহরগুলো থেকে দেশের অন্যত্র কোনো বাস-ট্রেন,ফেরি ও বিমান চলাচল করছে না। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শহরগুলোর ২ কোটির বেশি মানুষ।

এদিকে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার কারণে উহানের মার্কিন কনস্যুলেট থেকে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আমেরিকা। একই প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপান, মঙ্গোলিয়া, ফ্রান্সসহ আরো বিভিন্ন দেশ।

চীনে এমন এক সময় এই মহামারি দেখা দিল যখন নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে গোটা দেশ। নববর্ষের ছুটিতে চীনের কোটি কোটি মানুষ দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরতে যায়। উৎসবমুখর হয়ে ওঠে গোটা দেশ। কিন্তু এবার করোনাভাইরাস সেই উৎসবে কালো ছায়া বিস্তার করেছে। ইতিমধ্যে এই ভাইরাসের কারণে নববর্ষের অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। লোকজনকে ঘরবন্দি করে রাখতে বাড়ানো হয়েছে নববর্ষের ছুটির মেয়াদও।

মঙ্গলবার চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ক্লাস ও সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে। কবে নাগাদ ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি মন্ত্রণালয়।

চীনা স্কুল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে দেশের সকল ছাত্রছাত্রীদের ঘর থেকে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের সব ধরনের সামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গত বছরের শেষ নাগাদ চীনের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের উদ্ভব হয় এবং মাত্র দু সপ্তাহের মধ্যে এটি গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কেবল চীন নয়, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান ও জাপানসহ আরও প্রায় ১০টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চীনের এই ভাইরাস নিয়ে গত বুধবার জরুরি বৈঠক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

এই ভাইরাসে আক্রান্তদের সারিয়ে তুলতে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিষেধক বা চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি, তাই এটি প্রতিরোধের ওপরেই সর্বাত্মক জোর দেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, নতুন চিহ্নিত ভাইরাসটির প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় চীনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর উহানে। ধারণা করা হচ্ছে, এ ভাইরাসের সঙ্গে ২০০২-০৩ সালে চীন ও হংকংয়ে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের সংযোগ থাকতে পারে। ওই সময় সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে প্রায় ৬৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ