আড়ং কর্মীর মোবাইলে চেঞ্জিং রুমের শতাধিক ভিডিও!

দিনের পর দিন তার নারী সহকর্মীদের পোশাক বদলানোর দৃশ্য গোপনে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফ্যাশন ও গৃহস্থালি সামগ্রীর ব্র্যান্ড আড়ংয়ের এক সাবেক কর্মীর বিরুদ্ধে।

ওই ব্যক্তির মোবাইল ফোন তল্লাশি করে এ ধরণের শতাধিক ভিডিওর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ । এদের মধ্যে একাধিক নারীকে তিনি ‘ব্ল্যাকমেইল’ করারও চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ।

আড়ং এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম বিবিসিকে বলেন, একজন নারী কর্মীর সাথে অসদাচরণের অভিযোগে গত ডিসেম্বরেই ওই কর্মীকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছিলো।

এরপর চলতি জানুয়ারি মাসের শুরুতে একজন নারী কর্মীকে তার পোশাক পরিবর্তনের ভিডিও মেসেঞ্জারে দিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ার পর ওই কর্মী তাদের বিষয়টি জানান।

“১৫ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় অভিযোগ পাওয়ার পর পরদিনই আমরা বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাই। এবং ১৬ই জানুয়ারি আড়ংয়ের বনানী শাখার ওই নারী কর্মীও থানায় অভিযোগ করেন”।

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিম ঘটনাটি তদন্ত করে ২৫শে জানুয়ারি থানায় এজাহার দায়ের করে।

এজাহারে বলা হয়েছে, “মেসেজটি ওপেন করে ওই কর্মচারী দেখেন যে একটি ভিডিও প্রেরণ করা হয়েছে যেখানে ওই কর্মচারী বনানী আড়ংয়ের চতুর্থ তলায় কর্মচারী চেঞ্জ রুমে পোশাক পরিবর্তন করছে। যা তার অজান্তে ধারণকৃত। তখন আইডিটি তাকে ভিডিও কলে শরীর দেখাতে বলে এবং না করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেয়”।

২৫শে জানুয়ারিতেই অভিযুক্ত সাবেক আড়ং কর্মচারীকে আটক করে সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট।

এজাহারে বলা হয়েছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই কর্মচারী জানিয়েছেন যে তিনি আড়ংয়ে কর্মরত থাকার সময় চতুর্থ তলায় কর্মচারীদের পোশাক বদলানোর কামরা সংলগ্ন সানশেডে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোন ও সেলফি স্টিক দিয়ে নারী কর্মচারীদের পোশাক পরিবর্তনের দৃশ্য ভিডিও করতেন।

“ভিডিওগুলো অনেক নারী কর্মীর, যা তিনি গত বছর ডিসেম্বরে চাকরীচ্যুত হওয়ার আগে একই কায়দায় ধারণ ও সংরক্ষণ করেছেন”।

এসব কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বনানী থানায় মামলা দায়ের করে সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট কর্মকর্তা মোঃ ফারুক হোসেন।

এরই মধ্যে সাইবার সিকিউরিটির ইউনিটের কর্মকর্তারা বনানী আড়ংয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম বলছেন এসব বিষয়ে তারা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেন এবং সে কারণেই তারা অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশকে জানিয়েছেন।

“আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করছি। কিন্তু এমন ভাবে চেঞ্জ রুমের ভিডিও নেয়া হয়েছে যা বিস্ময়কর। এটি ভবনের বাইরের দিক থেকে করা হয়েছে”।

তিনি বলেন, “অন্য একজন নারী কর্মীর কাছ থেকে তার সাথে সম্পর্ক তৈরির জন্য জোর করার অভিযোগ পাওয়ার পর ডিসেম্বরে ওই কর্মচারীকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছিলো”।

আড়ংয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে যেখানে তারা অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলছে, তারা এই অভিযোগের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছে এবং অভিযোগকারীকে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে।

অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই অভ্যন্তরীন তদন্তের পর অভিযুক্তকে চাকুরীচ্যুতও করা হয় বলে জানাচ্ছে আড়ং।

এ ব্যাপারে আড়ং পুলিশকেও সর্বাত্মক সহায়তা করছে বলে বিবৃতিতে জানায়।

পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। খবর- বিবিসি বাংলা

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ