আল্লাহর প্রতি কর্তব্যের পরেই স্থান মাতা-পিতার
মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যকে রাসূলুল্লাহ (স.) আল্লাহর প্রতি কর্তব্যের পরেই স্থান দিয়েছেন। মাতার স্থান পিতার ঊর্ধ্বে স্থাপন করা হয়েছে। কোরআন বলেছেন, আমি মানবকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার আদেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে অতি কষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে, অতি কষ্টে তাকে প্রতিপালন করেছে। এ লালন-পালন ৩০ মাস পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ (স.) দুগ্ধ-মাতাকেও মাতার মতো ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে বলেছেন।
পিতা-মাতার প্রতি বাধ্যতা প্রকাশ করার জন্য কয়েকটি পদ্ধতি নিচে তুলে ধরা হল-
মাতা- পিতা দরিদ্র হলে, তাদের ভরণ-পোষণের ভার গ্রহণ করা সন্তানের একান্ত কর্তব্য। অভাবহীন হলেও তাদের উপঢৌকন ও দান করতে হয়। প্রত্যেক সময়ই তাদের সঙ্গে বিনম্র বচনে ও ভক্তিসহকারে কথা বলবে। বিদেশ-ভ্রমণে তাদের অনুমতি গ্রহণ করা কর্তব্য। মাতা-পিতার মৃত্যু হলেই সন্তানের কর্তব্য শেষ হয় না, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা কর্তব্য।
১. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সঙ্গে থাকার সর্বাপেক্ষা অধিক অধিকার কার? তিনি বললেন, তোমার মাতার। সে প্রশ্ন করল, তারপর কার? তিনি বললেন, তোমার মাতার। সে প্রশ্ন করল, তারপর কার? তিনি বললেন, তোমার পিতার। অন্য বর্ণনায়, তোমার পিতার, তারপর নিকটতম আত্মীয়স্বজনের, অতঃপর তোমার নিকটতম আত্মীয়জনের। (বোখারি, মুসলিম)
২. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তার নাক ধূলিতে মলিন হউক, তার নাক ধূলিতে মলিন হউক, তার নাক ধূলিতে মলিন হউক, প্রশ্ন করা হলো কার? তিনি বললেন, এ ব্যক্তির যার বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তার পিতা-মাতা একজন বা উভয়েই জীবিত থাকে এবং যে তবুও বেহেশতে যেতে পারেন। (মুসলিম)
৩. হাদিস: হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পিতা-মাতাকে গালি দেয়া সন্তানের জন্য বড় পাপ। প্রশ্ন হলো, কেউ তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ সে কোনো লোকের পিতাকে গালি দেয় এবং লোকটি আবার তার পিতাকে গালি দেয়। সে কোনো লোকের মাতাকে গালি দেয় এবং সে লোকটিও তার মাতাকে গালি দেয়। (বোখারি, মুসলিম)
৪. হাদিস: হজরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, পিতার প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের সর্বোত্তম উপায় পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধু-বান্ধবগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষা করা। (মুসলিম)
৫. হাদিস: হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি)
৬. হাদিস: হজরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। একজন লোক রাসূলুল্লাহ (স.)-কে বললেন, আমি একটি নিকৃষ্টতম পাপ করেছি। আমার কি তওবা আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা আছে? সে বলল, না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন। তোমার খালা আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। (তিরমিজি)
৭. হাদিস: হজরত আবু সায়েদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা উপস্থিত থাকাকালে, বনি সালামা সম্প্রদায়ের একটি লোক এসে রাসূলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করল, পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের কি কোনো উপায় আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাদের জন্য দোয়া চাওয়া, তাদের মৃত্যুর পর তাদের বন্ধুবান্ধবদের মান্য করা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
৮. হাদিস: হজরত মাবিয়া জাহেমা (রা.) হতে বর্ণিত। হজরত জাহেমা রাসূলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এসে বলল, আমি জেহাদে যোগদান করতে চাই। আপনার সঙ্গে আমি পরামর্শ করতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমার মা আছে? সে বলল, হ্যাঁ, আছে। তিনি বললেন, তার কাছে থাকো, কেননা বেহেশত তার পায়ের কাছে অবস্থিত। (নাসায়ি)
৯. হাদিস: হজরত আবু উমামাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করল, সন্তানের ওপর তার পিতা-মাতার কি হক (দাবি) আছে? তিনি বললেন, তারা উভয়েই তোমার বেহেশত ও তোমার দোজখ। (মিশকাত)
১০. হাদিস: হজরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যার নিকট তিনটি গুণ আছে, তার মৃত্যুকে আল্লাহ সহজ করবেন এবং তাকে বেহেশতে স্থান দেবেন। দুর্বলের প্রতি দয়া, মাতা-পিতার জন্য ব্যয় এবং দাস-দাসির উপকার সাধন। (তিরমিজি)
১১. হাদিস: হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করল, আমার মা ক্ষুধায় মারা গিয়েছে। সে যদি কথা বলতে পারত; মনে হয় দান করতে বলত। এখন দান করলে কি তাতে তার পুন্য হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (বোখারি, মুসলিম)