দক্ষিণ এশিয়ায় সড়কে সর্বোচ্চ মৃত্যু বাংলাদেশে

(প্রতীকি ছবি)

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘ডেলিভারিং রোড সেফটি ইন বাংলাদেশ’ লিডারশীপ প্রায়রিটিস অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভস টু ২০৩০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সর্বোচ্চ বাংলাদেশে বলে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার দেয়া এ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে দুর্ঘটনাকবলিত প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে মারা যান ১০২ জন। পাশের দেশ ভুটানে এ সংখ্যা ১৬ দশমিক ৭০, ভারতে ১৩, নেপালে ৪০ ও শ্রীলঙ্কায় সাতজন। যদিও বাংলাদেশে প্রতি হাজারে যানবাহন আছে মাত্র ১৮ জনের। ভারতে এ সংখ্যা ১৫৯, নেপালে ৮১, ভুটানে ১০৯ ও শ্রীলঙ্কায় ৩২৭।

বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনের দুর্ঘটনায় গড়ে দুজন সাইকেলচালকের মৃত্যু হয়। দুই বা তিন চাকার মোটরযানের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ১১ দশমিক ২০। আর গাড়ি ও হালকা যানের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ হাজার যানের দুর্ঘটনায় ১৩ দশমিক ৩০ জন গাড়িচালক ও ২৮ দশমিক ৬০ জন যাত্রী প্রাণ হারান। ট্রাক চালকদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ছয় দশমিক ১০, বাসচালকের ক্ষেত্রে আট দশমিক ২০ ও বাসযাত্রীর সংখ্যা ২৮৬ দশমিক ৬০ জন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পথচারী রয়েছেন। প্রতি ১০ হাজার যানবাহনের দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে পথচারী মারা যান ৩২ দশমিক ৭০ জন। ভুটানে এ সংখ্যা শূন্য দশমিক ৫০, ভারতে এক দশমিক ২০ ও শ্রীলঙ্কায় দুই দশমিক ১০।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ২০ হাজার ৭৩৬ থেকে ২১ হাজার ৩১৬ জন। আর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে বাংলাদেশে মাথাপিছু ক্ষতির পরিমাণ উচ্চ আয়ের দেশের তুলনায় দ্বিগুণ। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মাথাপিছু ক্ষতি বেড়ে তিনগুণ হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীরা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে এ ঝুঁকি ১৫ গুণ বেশি। গাড়ির লাইসেন্স দেওয়ার হার দ্রুত বাড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ না করলে ঝুঁকি কমবে না বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংক বলছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে শহর এলাকায় ৪০ শতাংশ মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক দুর্ঘটনাই ঢাকা শহরে ঘটছে। আর অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরগুলোয় দুর্ঘটনা ঘটছে ৩০ শতাংশ। ঢাকা শহরের সড়ক দুর্ঘটনার অর্ধেকের জন্য দায়ী বেপরোয়া গতির বাস।

সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের কিছু কার্যক্রমও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুমোদন, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা ২০২০ গ্রহণ। এর মাধ্যমে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সড়ক ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা কার্যক্রম ও দুর্ঘটনা-পরবর্তী উদ্ধার প্রক্রিয়া উন্নীত করতে তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশনা নেই পরিকল্পনায়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ