টিকটক বয়’ যুবলীগ নেতা খুন প্রেমঘটিত কারণে
বগুড়ায় প্রেমঘটিত বিরোধে টিকটক বয় ও ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মিরাজ আলী (২২) খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের এডওয়ার্ড পৌর পার্কের জগিং সেন্টারে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ সময় তার বন্ধু নাজমুল (১৬) ছুরিকাঘাতে আহত হন।
হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ জড়িত এক স্কুলছাত্র কিশোরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছে রক্তমাখা জ্যাকেট ও হত্যায় ব্যবহৃত বার্মিজ চাকু পাওয়া গেছে।
বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এ তথ্য দিয়েছেন।
গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে দুইজন হলেন- বগুড়া শহরের রহমাননগর শিশু মঙ্গলের পাশের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে মো. মিঠুন (২৮) ও সোনাতলা উপজেলার নওদাবগা বুড়িতলা গ্রামের মুন্নু মিয়ার ছেলে তারেক রহমান (১৮)। অপরজন কিশোর দশম শ্রেণির ছাত্র হওয়ার তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
পুলিশ সুপার ও অন্যরা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বগুড়া শহরের এডওয়ার্ড পৌর পার্কের জগিং সেন্টারে বগুড়া শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার নৈশপ্রহরী আবদুর রহমানের ছেলে মিরাজ আলীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ সময় নাজমুল নামে তার বন্ধু আহত হন।
এরপর সদর থানা ও ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল হত্যারহস্য উদঘাটন এবং আসামিদের গ্রেফতারে মাঠে নামে। হত্যার কারণ ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর রাতভর অভিযান চালিয়ে এক কিশোরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা হত্যার কারণ প্রকাশ করে।
তারা জানান, বগুড়া পৌর যুবলীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য, অটোরিকশা মেকানিক ও টিকটক বয় নিহত মিরাজের সঙ্গে বগুড়া শহরের বাদুড়তলার এক মেয়ের প্রায় এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল।
প্রেমিকার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড মিরাজের কাছে ছিল। সম্প্রতি ফেসবুকে ওই মেয়ের সঙ্গে সোনাতলার নওদাবগা গ্রামের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে সে মিরাজকে ছেড়ে ওই ছাত্রের সঙ্গে প্রেম করতে থাকে। মিরাজ ফেসবুকে ঢুকে দেখেন তার প্রেমিকা সোনাতলার ওই ছাত্রের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েছে।
তিনি প্রেমিকাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, ওই ছেলে তাকে বিরক্ত ও প্রেমের জন্য চাপ দিচ্ছে। এরপর মিরাজ ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও মোবাইল ফোনে ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর একে অপরকে হুমকি-ধামকি দেন।
এদিকে মিরাজ তাদের মধ্যে মীমাংসা করতে ওই প্রেমিক স্কুলছাত্র ও প্রেমিকাকে বগুড়া এডওয়ার্ড পৌর পার্কে ডাকেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে কিশোর স্কুলছাত্র তার সহযোগী তারেক রহমান ও মো. মিঠুনকে নিয়ে পার্কে আসেন।
তবে প্রেমিকা সেখানে আসেননি।
সেখানে মিরাজ ও তার বন্ধু নাজমুলের সঙ্গে মিঠুন, তারেক এবং অপরজনের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়।
তখন মিঠুন কাছে থাকা বার্মিজ চাকু দিয়ে মিরাজের বুকে দুটি ও নাজমুলের হাতে একটি আঘাত করে পালিয়ে যায়। এ সময় পার্কে থাকা জনগণ রক্তাক্ত মিরাজ ও নাজমুলকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেন। সেখানে চিকিৎসক মিরাজকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাজমুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে মূল অভিযুক্ত স্কুলছাত্র কিশোর হওয়ায় তাকে আলাদাভাবে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। মিঠুন ও তারেককে বুধবার বিকালে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া নিহতের বন্ধু নাজমুল ও প্রেমিকাকে সাক্ষী করা হবে।
তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রেমিকার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, মঙ্গলবার রাতেই নিহত মিরাজের বড়ভাই আতাউর রহমান অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
বগুড়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু জানান, মিরাজ আলী পৌর সংগঠনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ডে নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
আহত বন্ধু নাজমুল জানিয়েছেন, তারা নিয়মিত টিকটক ভিডিও করতেন। মিরাজ ও তিনিসহ তাদের ২০-২৫ জনের একটি টিকটক গ্রুপ আছে।
মিরাজের ভাই মামলার বাদী আতাউর রহমান জানান, তার ভাইয়ের সঙ্গে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে শুনেছেন। গত সোমবার রাতে মিরাজ তাকে বলেছিল- অপরিচিত কয়েকজন তাকে ফোনে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।