হত্যা মামলায় এজাহার পরিবর্তন, সাবেক ওসি কারাগারে
রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় এজাহার পরিবর্তনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে থানার সাবেক ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদ শাকিলকে।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন শাকিল। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক ইসমত আরা তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
ওসি শাকিলের আইনজীবী আসলাম সরকার জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদ গত ৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ওই দিন আদালতে পূর্ণাঙ্গ নথি না থাকায় শুনানি হয়নি।
রোববার জামিন আবেদনের শুনানি দিন ধার্য ছিল। জামিন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ১১ জুন হত্যাকাণ্ডের শিকার শ্রমিকনেতা নুরুল ইসলামের মামলার এজাহার পরিবর্তন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তার মেয়ে নিগার সুলতানা হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করেন। এজাহার বদলের অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে সত্যতা মেলায় ওসি শাকিলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
পরে হাইকোর্টের আদেশানুযায়ী, ওসি শাকিলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। হাইকোর্ট মামলাটি তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দেন। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি রাজশাহী দুদকের সহকারি পরিচালক মো. আল আমিন বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন। পরে এই মামলায় শাকিলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।
পাশাপাশি হাইকোর্টের আদেশ মতে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান তালুকদার একটি পৃথক প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদনেও শাকিলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। শাকিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ জুন পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের একটি ইটভাটা থেকে পুঠিয়া উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে তিনি ওই বছরের ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সংগঠনের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে ফলাফল নিয়ে রাজশাহীর আদালতে নুরুল ইসলাম একটি মামলা করেন। এই মামলা চলাকালীন ওই বছরের ১০ জুন রাতে নিখোঁজ হন নুরুল ইসলাম। আর পরদিন স্থানীয় একটি ইটভাটায় তার লাশ পাওয়া যায়।
এদিকে নুরুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় তার মেয়ে নিগার সুলতানা একদিন পর পুঠিয়া থানায় প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুর রহমানসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দাখিল করেন।
পরে ওসি শাকিল উদ্দিন শাকিল এজাহারটি সংশোধন করতে বলেন বাদীকে। বাদী পরে এজাহার সংশোধন করে দাখিল করেন। এ বিষয়ে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী রাজশাহীর আদালতে আরেকটি একটি মামলা করেন।
তখন আদালতের নির্দেশে পুলিশ নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার একটি এজাহার দাখিল করেন। তবে পুলিশের দাখিল করা এজাহারে মামলায় কোন আসামির নাম ছিল না। সকলেই অজ্ঞাত।
বাদী নিগার সুলতানা আদালতকে বলেন যে, এজাহারটি তিনি থানায় দিয়েছিলেন পুলিশ সেটি আদালতে জমা দেননি। মনগড়া একটি এজাহার দিয়েছেন যা তিনি থানায় দাখিল করেননি। পরে বাদী উচ্চ আদালতে রিট মামলা করলে আদালত ওসি শাকিলকে সাময়িক বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেন দুর্নীতি দমন কমিশনকে। সেই মামলাতেই ওসি শাকিলকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।