জাওয়াদের প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র, বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। উপকূলজুড়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ মেঘলা থাকায় দেখা মেলেনি সূর্যের। চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে স্থানীয় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে দুবলার চর। এতে করে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির ২০ লাখ কেজি মাছ নষ্ট হয়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে কুয়াকাটায় হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। পর্যটনশূন্য রয়েছে কুয়াকাটা। আগাম রবিশস্যে বীজতলা বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন সাগর পাড়ের চাষীরা।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে। মৃদু ঢেউ আচঁড়ে পড়ছে সমুদ্র সৈকতের তীরে। গভীর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত জেলেরা তাদের ট্রলার নিয়ে উপকূলের দিকে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কয়েক হাজার জেলে ইতোমধ্যে তাদের ট্রলারসহ মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে উপকূলীয় রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ মৎস্য কেন্দ্রে ও কুয়াকাটার আলিপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্নিঝড় ‘জাওয়াদ’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর এবং দুর্বল হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে। বাতাসের চাপ কিছুটা বেড়েছে।

আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। গতকাল সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। নিম্নচাপটি উপকূলীয় এলাকায় ঘন্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী ধমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শংকা করছে আবহাওয়া অফিস। তাই চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে স্থানীয় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। সকল মাছ ধরা সকল ট্রলার সমূহকে নিরাপাদ আশ্রয়ে থাকবে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদেরর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর পাড়ের সুন্দরবনের দুবলার চরের শুটকি ব্যবসায়ীরা। গত তিন-চার দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় তিন ফুটের অধিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে দুবলার চর। ফলে চরে শুকানোর জন্য রাখা প্রায় ২০ লাখ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যার মূল্য প্রায় কোটি টাকা। এতে রাজস্ব আয়ের ঘাটতিতে পড়েছে বনবিভাগও।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলা জেলে পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় বলেন, ঘূর্নিঝড়ের কারণে তিন-চারদিন ধরে তিন ফুটের অধিক জোয়ারের পানিতে দুবলার চর তলিয়ে যাওয়ায় জেলে-মহাজনদের প্রায় কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় জেলেরা জাল, নৌকা-ট্রলার নিয়ে চরে অবস্থান করছে। খারাপ আবহাওয়ায় মাছ শুকাতে না পারায় সেগুলো পঁচে যাচ্ছে। এর আগে প্রচুর মাছ হচ্ছিল জেলেদের। গত নভেম্বর এ চরের শুটকি থেকে ৫৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, আর ডিসেম্বরে টার্গেট ছিল ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা আয়ের। কিন্তু ক্ষতির কারণে অর্ধেকে নেমে আসবে রাজস্ব আয়। চরটিতে জেলে ও মহাজন মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার লোক রয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ শুটকি মৌসুম চলবে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ