‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল ’

ঋতুর পালাবদলে হাজির হওয়া শীতকাল মুমিনের জন্য অনন্য আশীর্বাদ। অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে অনেক বেশি ইবাদত করা যায়। তাই তো রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শীতকে মুমিনের বসন্ত বলে উল্লেখ করেছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ মুসনাদে আহমাদ। শীতকালে যেসব ইবাদতে সহজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়- শুকরিয়া আদায় : শীতকাল আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এক অনন্য নিয়ামত। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য আমাদের প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। মিষ্টি সূর্যরশ্মিতে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো মুক্তাদানার মতো ঝলমল করে। গাছের পাতা থেকে শিশির ঝরে পড়ার টুপটাপ শব্দ আর পাখিদের কিচিরমিচির আন্দোলিত করে আমাদের মনকে। কি অপরূপ শীতের সকাল! শিশিরে ভেজা বিশাল পুষ্পিত শর্ষে খেত, সবুজ রং ধরা গম খেত, টমেটো, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি খেত ফসলের মাঠকে সাজিয়ে তোলে। বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শালগম, গাজর, ব্রোকলি, শিম ইত্যাদি সবজির পসরা চোখে পড়ে। এত সুন্দর করে শীতের প্রকৃতিকে কে সাজান? তিনিই আল্লাহ। শীতকাল মানেই নানা রকমের পিঠার আয়োজন। শীতের পিঠাগুলোর অনন্য উপাদান খেজুরের গুড়। গুড় তৈরির রস পাওয়া যায় শীতকালেই। খেজুর রসের পায়েস এক মজাদার খাবার। অত্যন্ত সুস্বাদু ও মানবদেহের জন্য উপকারী এ খেজুর গাছের মিষ্টি রসের ব্যবস্থা কে করেন? উত্তর একটিই- আল্লাহ। তিনি বলছেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি তো অঝর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। এরপর মাটিকে বিদীর্ণ করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্যাদি, আঙুর, শাকসবজি, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট বাগান, ফলফলারি ও ঘাস। এসব তোমাদের ও তোমাদের পালিত পশুকুলের জীবনধারণের জন্য।’ সুরা আবাসা, আয়াত ২৪-৩২। শীতকালে এতসব নিয়ামত দিয়ে আমাদের চারপাশকে যে মহান রব ভরে তোলেন প্রাণ ভরে তাঁর শুকরিয়া আদায়ই আমাদের প্রথম কাজ। শীতকালে দিন থাকে খুবই ছোট এবং ঠাণ্ডা। ফলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে যেমন থাকতে হয় না, তেমনি তৃষ্ণার্ত হওয়ারও ভয়ও কম। এজন্যই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শীতল (সহজ) গনিমত হলো শীতকালে রোজা রাখা।’ তিরমিজি। কাজা রোজা রমজানের পরই আদায় করা উচিত। তবু যদি কোনো কারণে কারও কাজা রোজা থেকে যায় তবে এটিই হলো কাজা রোজাগুলো আদায় করে নেওয়ার উত্তম সময়। শীতকালে রাত হয় দীর্ঘ। কেউ যদি এশার সালাতের পর রাত ৯টায়ও ঘুমায় আর ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা ঘুমায় তবু পুরো সাত ঘণ্টা ঘুমানো হবে। আর ভোর ৪টার পরও শীতকালে প্রায় দুই ঘণ্টা রাত থাকে। একজন মুমিন চাইলে সে দুই ঘণ্টা আল্লাহর নৈকট্য লাভে তাহাজ্জুদে কাটাতে পারে। তাই তো হাদিসে এসেছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন নফল নামাজ পড়তে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ বায়হাকি।

অজু ও নামাজের অপেক্ষা : শীতকালে পরিপূর্ণভাবে অজু করা অনেক সওয়াবের কাজ। এমনকি যদি কেউ গরম পানি দিয়ে অজু করে সেও সেই পুণ্য পাবে। ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না যার কারণে আল্লাহ পাপ মোচন করবেন এবং জান্নাতে তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ আল্লাহর রসুল! তিনি বললেন, মন না চাইলেও ভালোভাবে অজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করা।’ মুসলিম।

পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় শীতকালে অনেক গরিব মানুষকে কষ্ট করতে হয়। শীতার্ত মানুষকে প্রয়োজনীয় বস্ত্র দিয়ে জান্নাতের মহা নিয়ামত লাভে ধন্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ রেশমি কাপড় পরাবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে মহামহিম আল্লাহ তাকে জান্নাতের পবিত্র প্রতীকধারী শরাব পান করাবেন।’ আবু দাউদ। আমাদের নিকটস্থ অভাবী মানুষটিকে একটি শীতবস্ত্র কিনে দিয়ে আমরাও পেতে পারি জান্নাতের সেই সবুজ রেশমি পোশাক। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন!

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ