১ নভেম্বর থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত

দীর্ঘ প্রায় আট মাস পর খুলতে যাচ্ছে সিলেট বিভাগের পর্যটন স্পটগুলো। ১ নভেম্বর থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। ফলে আবারো আগের মতো পর্যটকে মুখর হয়ে উঠবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বড়লেখা প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ সাড়ে ৮ মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে আগামী ১ নভেম্বর পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে দেশের অন্যতম পিকনিক স্পট মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্ক। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য গত ১৭ মার্চ বনবিভাগ এ পর্যটন স্পটটি বন্ধ ঘোষণা করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনবিভাগের স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস মাধবকুন্ড খুলে দেয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বনবিভাগ গত ১৭ মার্চ দেশের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র মাধবকুন্ড ইকোপার্ক বন্ধ ঘোষণা করে। জুলাই পর্যন্ত পর্যটকের আনাগোনা না থাকলেও আগস্টের প্রথম থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকরা মাধবকুন্ড আসতে থাকেন। প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় শত শত পর্যটক ফিরে যায়। দুর দুরান্ত থেকে ছুটে গিয়ে কাছাকাছি পৌঁছেও পর্যটন এলাকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে না পেরে অনেকেই বনবিভাগের কর্মচারী, পর্যটন পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ান। ক্ষুব্দ পর্যটকের সাথে ঘটে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। পর্যটকদের সামাল দিতে স্থানীয় বনবিভাগ ও পর্যটন পুলিশকে হিমসিম খেতে হয়েছে। অবশেষে ১ নভেম্বর মাধবকুন্ড খুলে দেয়ার খবরে পর্যটক ও মাধবকুন্ডের ব্যবসায়ী মহলের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।

এদিকে, সাড়ে ৭ মাস পর মাধবকুন্ড খুলে দেয়ার খবরে পর্যটক বরণে প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীবৃন্দ ও পর্যটক সহায়ক উন্নয়ন কমিটি। তারা যৌথভাবে বুধবার থেকে মাধবকুন্ডর অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট পরিস্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস জানান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে অক্টোবর পর্যন্ত মাধবকুন্ড বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ১ নভেম্বর পর্যটকদের জন্য মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্ক খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে আগত পর্যটকদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে হবে।

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগামী ১ নভেম্বর রোববার খুলছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এর আগে করোনাভাইরাসে কারণে ১৯ মার্চ বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. শফিউল আলম চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের প্রবেশ সাময়িক বন্ধ করা হয়।

এদিকে, পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করার থেকেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পর্যটকশুন্য। নেই হইহুল্লোড়, নেই কোন শব্দ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যরে এ উদ্যান দীর্ঘদিন ছিলো আশ্চর্য নীবর, নিস্তব্ধ।
দীর্ঘদিন পর্যটক শূন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান আগের পরিবেশে ফিরে গেছে। ফলে মনের আনন্দে বন্যপ্রাণী এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে উদ্যানের ভিতর সমতলে ও গাছ থেকে গাছের ডালে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ১ নভেম্বর থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দশনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, এমন সিদ্ধান্তের কথা আমি মন্ত্রণালয় থেকে শুনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা পরপরই আমরা লাউয়াছড়ায় পর্যটকের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিই। শুধু লাউয়াছড়াই নয়, সিলেটের বিভাগের বিভিন্ন জাতীয় উদ্যানেও একই সিদ্ধান্ত ঘোষিত হবে। কয়েকদিন পরই পর্যটকরা বন ভ্রমণের সুযোগ পাবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। ’

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জ সূত্র জানায়, তৎকালীন আসাম সরকার ১৯১৭ সালে পশ্চিম ভানুগাছের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর বনভ‚মিকে প্রাথমিকভাবে সংরক্ষিত সম্পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর ১৯২৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা এবং পরে ১৯৯৬ সালে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। বনের চারপাশ ঘিরে চা বাগান, হাওর, সংরক্ষিত বন ও বনসংলগ্ন গ্রাম রয়েছে।

লাউয়াছড়ায় জাতীয় উদ্যানে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ২৪৬ প্রজাতির আবাসিক এবং পরিযায়ী পাখি। এছাড়াও রয়েছে কয়েক প্রজাতির স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণী। এগুলোর মধ্যে অন্যতম মহাবিপন্ন উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, বনরুইসহ বিরল প্রজাতির বিপন্ন প্রাণী।

মাধবপুর সংবাদদাতা জানান, নভেম্বরের ১ তারিখ হবিগঞ্জে চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান খুলে দেয়া হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আট মাস বন্ধ থাকার পর এখানে প্রবেশের সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। বুধবার রাত ১১টায় চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী (ইউএনও) সত্যজিত রায় দাশ এ তথ্য জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ১৯ মার্চ এ পর্যটন স্পটটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে গত আট মাস ধরে পর্যটক না আসায় বনটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য পুরোপুরিভাবে ফিরে পেয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
সাতছড়ি রেঞ্জ অফিসার মোতালেব জানিয়েছে, খোলা থাকলে সাতছড়িতে প্রতিদিন আড়াই থেকে পাঁচ হাজার পর্যটক আসেন। বয়স্কদের টিকিট বিক্রি হতো ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২৫ টাকা।

উল্লেখ্য, সাতছড়ি উদ্যানের ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯১২ সালে। ওই বছর প্রায় ১০ হাজার একর দুর্গম পাহাড়ি জমি নিয়ে গঠিত রঘুনন্দন হিলস্ রিজার্ভই কালের পরিক্রমায় আজকের উদ্যান। অবশ্য জাতীয় উদ্যান হওয়ার ইতিহাস বেশিদিনের নয়। ২০০৫ সালে ৬০০ একর জমিতে জাতীয় উদ্যান করা হয়। এ উদ্যানের ভেতরে রয়েছে অন্তত ২৪টি আদিবাসী পরিবারের বসবাস, রয়েছে বন বিভাগের লোকজন।

পর্যটকদের জন্য চালু করা প্রজাপতি বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, হাঁটার ট্রেইল, খাবার হোটেল, রেস্ট হাউস, মসজিদ, রাত যাপনে স্টুডেন্ট ডরমিটরিসবই এখন নিস্তব্ধ। উদ্যানে দুই শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধা জারুল, আওয়াল, মালেকাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তুর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আরো আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি। রয়েছে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, শিয়াল, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণের বিচরণ। সরীসৃপের মধ্যে আছে কয়েক জাতের সাপ। কাও ধনেশ, বন মোরগ, লাল মাথা ট্রগন, কাঠঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাসস্থল এই উদ্যান।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ