পুষ্টিগুণে ভরপুর পাকা কলা…..
কাজের ব্যস্ততার কারণে খুব কম মানুষই স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার সময় পান। রান্না করা খাবারের চেয়ে ফাস্টফুডের দিকে ঝোঁকটা তাই অনেকের বেশি। তবে শরীর ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার তো খেতেই হবে। এ জন্য ফাস্টফুডের বদলে খুঁজে নিতে পারেন সহজ প্রাকৃতিক খাবার। এর মধ্যে কলা অন্যতম। কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। আর এটি স্বাদেও ভালো।
কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি আছে। মাত্র একটি কলা খেলেই অনেক সময় পর্যন্ত সেটা শরীরে শক্তি যোগায়। মুহূর্তের মধ্যে এনার্জি পেতে কলার জুরি মেলা ভার। কিন্তু তা ছাড়াও যে, প্রচুর কাজ করে কলা।
প্রতিদিন একটি আপেল ডাক্তার থেকে দূরে রাখবে। অথচ কলা সম্পর্কে এরকমভাবে এতো সুন্দর করে আমরা সাধারণত কিচ্ছু বলি না। কলাকে আমরা এই অবহেলা করি কারণ কলা আপেলের মতো সেরকম উচ্চ পর্যায়ের না বলে? একমাত্র ব্যাচেলর এবং জিম সচেতন ব্যক্তিরাই কলাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। প্রতিদিন ২টি পাকা কলা খেলে, তা আপনাকে দীর্ঘ সুস্থ জীবন যাপনে নেতৃত্ব দিতে পারে। জেনে নিন কলার বহুগুণ-
অবসাদ
অবসাদে ভোগা কিছু মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে কলা খেলে ভাল বোধ করেন তারা। কলার মধ্যে থাকা ট্রিপটোফ্যান প্রোটিন মানুষের শরীরে পরিণত করে সিরোটোনিন হরমোনে। সিরোটোনিন হরমোন অফ হ্যাপিনেস নামে পরিচিত। শরীরে এই হরমোনের মাত্রা বাড়লে মুড ভাল হয়ে রিল্যাক্স বোধ করে মানুষ। মুড অফ একটি অতি পরিচিত প্রি-মেন্সট্রয়াল সিনড্রোম। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি৬ শরীরে গ্লুকোজের সামঞ্জস্য বজায় রেখে মুড ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
অ্যানিমিয়া
কলার মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণ আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে অ্যামোনিয়ার সম্ভাবনা কমে। এমনকি, অ্যামোনিয়া সারাতেও সাহায্য করে কলা।
রক্তচাপ
কলার মধ্যে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি অথচ নুনের মাত্রা কম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা রুখতে পারে কলা। ইউ ফুড ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কলার এই গুণের কথা মাথায় রেখে স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধে কলার ব্যবহার সুপারিশ করেছে।
মস্তিষ্ক
টানা ১ বছর ধরে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল ইংল্যান্ডের টুইকেনহ্যাম স্কুলের ২০০ জন পড়ুয়ার ওপর। পরীক্ষার আগে টানা ব্রেকফাস্ট, ব্রাঞ্চ ও লাঞ্চে কলা খাওয়ানো হয় তাদের। দেখা গিয়েছিল কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম তাদের মনঃসংযোগ বাড়ানোর ফলে অন্যদের থেকে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছিলেন ওই ২০০ জন পড়ুয়া
মর্নিং সিকনেস
কাজের চাপ, মানসিক চাপে অনেক সময়ই সকালে ঘুম থেকে উঠে অসুস্থ বোধ করি আমরা। রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকায় কম থাকে এনার্জির মাত্রাও। এই সময় কলা বজায় রাখতে রক্তে শর্করার সঠিক মাত্রা। কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় পেট পরিষ্কার রাখতে কলা অপরিহার্য।
মশার কামড়
মশার কামড়ে ফুলে, লাল হয়ে ওঠা ত্বকের যত্ন নিতে ক্রিম বা অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করার আগে কলার খোসা ঘষে দেখুন ত্বকের ফুলে ওঠা অংশে।
স্নায়ু
কলায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি যা স্নায়ুকে শান্ত করে। মানসিক চাপ কাটাতে ফ্যাটি ফুডের থেকে বেশি প্রয়োজনীয় কলা। কার্বোহাইড্রেটে পরিপূর্ণ হওয়ায় কলা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রেখে স্নায়বিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
আলসার
নরম ও মিহি হওয়ার জন্য পেটের সমস্যায় খুবই উপকারী খাবার কলা। অত্যন্ত খারাপ পেটের রোগেও কলাই একমাত্র ফল যা নির্বিঘ্নে খাওয়া যেতে পারে। কলা অস্বস্তি কমিয়ে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
অনেক দেশে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কলা ব্যবহার করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জ্বর হলে ওষুধের বদলে খাওয়ানো হয় কলা। থাইল্যান্ডে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে কলা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।