বড়লেখায় ব্যবসায়ীকে তুলে নিতে সন্ত্রাসী হামলা : জনতার হাতে আটক ৪
বড়লেখা উপজেলার ফকিরের বাজারের এক ব্যবসায়ীকে জোরপূর্বক তুলে নিতে বহিরাগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সন্ত্রাসী সন্দেহে আটক করা ৪ ব্যক্তিকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দুপুরে বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাজারে। গোলাপগঞ্জের হাজী ফয়জুর রহমান ওরফে আব্দুস সালাম পাল্টা অভিযোগ করেন, জামাতার ক্রয়কৃত ভুমি তার (জামাই) কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তিনি দেখতে গেলে ভুমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ ডাকাত ডাকাত চিৎকার করায় জনতা তাদেরকে ধাওয়া করে।
ফকিরের বাজারের ব্যবসায়ীদের সুত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে পুলিশ-জনতা আয়োজিত ধর্ষণ বিরোধী সমাবেশের শেষ পর্যায়ে ফকিরের বাজারে হট্টগোল শোনে অনেকেই এগিয়ে যান। জানতে পারেন ব্যবসায়ী আব্দুস শুকুরের দোকানের সামনে দুইটি নোহা গাড়ী এসে থামে। গাড়ী থেকে ৬/৭ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তি নেমে আব্দুস শুকুরের দোকানে গিয়ে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিতে হামলা চালায়। এসময় তার ভাতিজা ফয়সল আহমদ এগিয়ে আসলে তার ওপরও হামলা চালানো হয়। তাদের চিৎকারে পাশের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসলে সন্দেহভাজনরা দ্রুত গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। ব্যবসায়ী-জনতা ধাওয়া করে ৪জনকে আটক করে ইউনিয়ন অফিসে নিয়ে আসেন। এরা হলেন- গোলাপগঞ্জ উপজেলার বানিগ্রামের জিবিল ওরফে টিটু, রনকেলি গ্রামের সাবুল আহমদ, হাসান আহমদ ও বাগলা গ্রামের হাজী ফয়জুর রহমান ওরফে আব্দুস সালাম।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে গেলে বর্নি ইউনিয়নের সদস্য আব্দুস ছামাদ, ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনাম উদ্দিন, সমাজসেবক বুলবুল আহমদ, ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, আবুল হোসেন, যুবলীগ নেতা রাসেল আহমদ, সিএনজি ষ্ট্যান্ডের ম্যানেজার জাহেদ আহমদ প্রমুখ জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ফকিরবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস শুকুরের রডসিমেন্টের দোকানের সামনে দুইটি নোহা গাড়ী থামে। গোলাপগঞ্জের বাগলা গ্রামের জনৈক হাজী ফয়জুর রহমান ওরফে আব্দুস সালামের নেতৃত্বে ৬-৭ জন যুবক ব্যবসায়ী আব্দুস শুকুরের দোকানে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। আব্দুস শুকুরের ভাতিজা এগিয়ে আসলে তার ওপরও হামলা চালানো হয়। চিৎকার শুরু করায় লোকজন জড়ো হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া করলে বাকিরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গেলেও ৪জনকে আটক করে ইউনিয়ন অফিসে নিয়ে আসা হয়। পরে তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এখন শোনা যাচ্ছে সন্ত্রাসী হামলার নেতৃত্বদানকারী গোলাপগঞ্জের হাজী ফয়জুর রহমান ওরফে আব্দুস সালাম সন্ত্রাসী হামলার শিকার ব্যবসায়ী আব্দুস শুকুর, তার ভাতিজা ফয়সল আহমদসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ব্যবসায়ী আব্দুস শুকুর জানান, ফকিরবাজারে একটি জায়গা নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সরকারী রাস্তা দখল করে বিল্ডিং নির্মাণের চেষ্টা চালালে আমি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেই। বিভিন্নভাবে উক্ত ভুমি দখলে ব্যর্থ হয়ে তার শ্বশুড় ফয়জুর রহমান ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে আমাকে ও আমার ভাতিজা ফয়সলকে হত্যা করতে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছেন। চিৎকার করায় লোকজন জড়ো হয়ে তাদেরকে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। ব্যবসায়ী-জনতা ধাওয়া করে ফয়জুর রহমানসহ তার ৩ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। কিন্তু থানায় নিয়ে পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
গোলাপগঞ্জের বাগলা গ্রামের হাজী ফয়জুর রহমান ওরফে আব্দুস সালাম জানান, বড়লেখার ফকিরবাজারে জামাতা জাহাঙ্গীর হোসেনের ক্রয়কৃত কিছু ভুমি (দোকান ভিটা) রয়েছে। শনিবার সকালে জামাতার কয়েকজন বন্ধুসহ তিনি এ জায়গাটি দেখতে যান। গাড়ী থেকে নেমে হেটে দেখছিলেন। তখন আব্দুস শুকুর ও তার ভাতিজা ফয়সল আহমদ ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে লোকজন তাদেরকে ধাওয়া করে। আত্মরক্ষায় পালানোর চেষ্টা করেন। অন্যরা দ্রুত সরতে পারলেও আমিসহ ৪জনকে ধরে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে পুলিশের হেফাজতে দেয়ায় আমরা রক্ষা পাই।
থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, হাজী ফয়জুর রহমান ওরফে আব্দুস সালামসহ ৪ ব্যক্তিকে কিছু লোক ধাওয়া করে আটকের পর বর্নি ইউনিয়ন অফিসে রাখে। পুলিশ সেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এব্যাপারে হাজী ফয়জুর রহমান ওরফে আব্দুস সালাম কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে।