ইসলামে ঋণ শোধ করার হাদিস…..

ইসলামে ঋণদানে সুদের কোনো ব্যবস্থা নেই। ইসলাম বিনা লাভে ঋণদানের জন্য উৎসাহিত করেছে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির ওপর প্রথম ঋণ ধার্য হবে। ঋণ শোধ না করা কবিরা গোনাহ্। ঋণ শোধ করার জন্য খাতক (দেনাদার, ঋণী) জাকাতও গ্রহণ করতে পারে।

১. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, এক ব্যক্তি সর্ব সাধারণকে ঋণদান করত। সে ছেলেকে বলত, অভাবগ্রস্ত লোকের ঋণ ক্ষমা করে দিও, আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। তিনি বলেন, সে পাপমুক্ত হয়ে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেছে। (বোখারি, মুসলিম)

২. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা ও আবু কাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তারা বলেন, এক ব্যক্তি ঋণ আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (স.)-কে কর্কশভাবে তাগাদা করলে, সাহাবিগণ তাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলো। তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও, কেননা মহাজনের দাবি করার অধিকার আছে। তাকে একটি উট খরিদ করে দাও তারা বলল, (একটি উট এনে) এটার বেশি বয়স্ক উট (আমরা) দেখি না। তিনি বললেন, এটা খরিদ করে তাকে দাও, কেননা তোমাদের ভেতর সর্বাপেক্ষা উত্তম এ ব্যক্তি, যে ঋণ আদায়ে সর্বাপেক্ষা উত্তম। (বোখারি, মুসলিম)

৩. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে আদায় করার নিয়তে মানুষের সম্পত্তি ধার নেয়, আল্লাহ তাকে সঙ্গতি দান করেন এবং যে আদায় না করার নিয়তে নেয়, আল্লাহ্ তাকে ধ্বংস করেন। (বোখারি)

৪. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.)-এর কাছে ঋণগ্রস্ত কোনো লাশ আনা হলে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, তার ঋণ পরিশোধের কোনো সম্পত্তি আছে? যদি বলা হতো, পরিশোধের মতো ত্যাজ্য সম্পত্তি আছে, তখন তিনি জানাজা পড়তেন। অন্যথায় সকলকে বলতেন, তোমাদের বন্ধুর জানাজা পড়। যখন আল্লাহ তাকে বিজয় দান করতে লাগলেন, তিনি উঠে বললেন: আমি মুসলমানদের কাছে তাদের জীবনাধিক প্রিয়। মুমিনদের মধ্যে যে কেউ ঋণ রেখে মারা যায়, তার পরিশোধের ভার আমার ওপর, আর যে সম্পত্তি রেখে যায়, তার ভার ওয়ারিসগণের ওপর। (নাসায়ী, মুসলিম)

৫. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে পর্যন্ত কোনো মুমিন তার ঋণ পরিশোধ না করে, সে পর্যন্ত তার রুহ (আত্মা) ঋণের সাথে লটকান থাকে। (তিরমিজি)

৬. হাদিস: হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ধনীর পক্ষে বিলম্বে (ঋণ আদায়) অত্যাচার স্বরূপ। যখন তোমাদের কাউকেও ধনীর ওপর ন্যস্ত করা হয়, সে যেন তা গ্রহণ করে। (বোখারি, মুসলিম)

৭. হাদিস: হজরত আবুল ইয়াসার ও আবু কাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ঋণগ্রস্ত লোককে সময় দেয় বা তাকে ক্ষমা করে, আল্লাহ্ তাকে নিজ ছায়ায় স্থান দেবেন। অন্য বর্ণনায়, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন বিপদ হতে রক্ষা করবেন। (মুসলিম)

৮. হাদিস: হযরত আবু কাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, আমাকে সংবাদ দিন যে, যদি আল্লাহর পথে সবর করে পুরস্কারের আশায় সম্মুখীন হয়ে, পশ্চাৎপদ না হয়ে আমি নিহত হই তবে আমার গুনাহ কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এ ব্যক্তি চলে যেতে লাগলে তাকে ডেকে আবার বললেন, হ্যাঁ, ঋণ ব্যতীত। জিব্রাঈল (আ.) এরূপ বলেছিলেন। (মুসলিম)

৯. হাদিস: হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, ঋণ ব্যতীত শহীদের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হয়। (তিরমিজি)

১০. হাদিস: হজরত আবু মূসা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ যে সব বড় গুনাহ নির্ধারিত করেছেন, তাছাড়া অন্যান্য গুনাহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ তার সাথে সাক্ষাতের সময় কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ। পরিশোধের কোনো সম্পত্তি না রেখে পরলোকগমন করা। (আবু দাউদ)

১১. হাদিস: হজরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.)-এর কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। তিনি তা পরিশোধ করলেন এবং (ইচ্ছা করে) কিছু বেশি দিলেন। (আবু দাউদ)

১২. হাদিস: হজরত আবদুল্লাহ বিন আবু রাবিয়্যাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত নবী করীম (সা.) আমার নিকট হতে ৪০,০০০ দেরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। তার মালামাল আসলে, তিনি তা পরিশোধ করে বললেন, আল্লাহ আপনার পরিজনবর্গে ও ধন-সম্পত্তিতে বরকত দিন। (নাসায়ী)

১৩. হাদিস: হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যদি তোমাদের কেউ ঋণ দেয় এবং দেনাদার যদি তাকে কোনো উপহার দেয় অথবা কোনো প্রাণীর ওপর আরোহন করায়, তা গ্রহণ করিও না এবং তার ওপর আরোহণ করো না। যদি এর পূর্বে এরূপ হয়ে থাকে তাতে দোষ নেই। (ইবনে মাযাহ্)

১৪. হাদিস: হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি তোমাদের কাউকে ঋণ দেয়, দেনাদার যেন তাকে উপহার না দেয়। (বোখারি)

১৫. হাদিস: হজরত সালামাহ বিন আওয়াহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (স.)-এর দরবারে বসে আছি। এমন সময় একটি মৃতদেহ আনা হলো, তারা বলল, জানাজার নামাজ পড়ুন। তিনি বললেন, তার কি ঋণ আছে? তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সে কি কিছু রেখে গেছে? তারা বলল, তিন দিনার (স্বর্ণমুদ্রা)। অতঃপর তিনি জানাজা পড়লেন। অতঃপর দ্বিতীয় লাশ আনা হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তার কি ঋণ আছে? তারা বলল, তিন দিনার। তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুর জানাজা পড়। আবু কাতাদাহ বললেন, হে আল্লাহর রসূল। তার জানাজা পড়ুন। আমার ওপর তার ঋণের ভার। অতঃপর তিনি জানাজা পড়লেন। (বোখারি)

১৬. হাদিস: হজরত আবু বোরদাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মদিনায় এসে আবদুল্লাহ্ বিন সালামের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বললেন, তুমি এমন দেশে বাস করছ যেখানে সুদের প্রচলন আছে। যদি কোনো লোকের কাছে কিছু পাওনা থাকে এবং সে যদি তোমাকে এক বোঝা ডুমুর বা এক বোঝা আটা বা এক বোঝা তৃণ উপহার দেয়, তা গ্রহণ করো না, কেননা এটা সুদ। (বোখারি)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ