পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গায় মানুষ যেভাবে থাকে
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ‘ডেথ ভ্যালি’-তে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত রোববার (১৬ আগস্ট) ডেথ ভ্যালির ন্যাশনাল পার্কে ১৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। খবর বিবিসি বাংলা
ব্রান্ডি স্টুয়ার্ট কাজ করেন ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, যে রকম গরম পড়েছে, আমরা সবাই আমাদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি। আপনি যখন বাইরে যাবেন, মনে হবে যেন আপনার মুখে অনেকগুলো হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস এসে পড়ছে। এক স্তীর্ণ মরুভূমি মাঝে মাঝে আছে বালিয়াড়ি আর গভীর খাদ। পাশ্ববর্তী রাজ্য নেভাডা পর্যন্ত বিস্তৃত।
ডেথ ভ্যালি হচ্ছে বিশ্বের উষ্ণতম জায়গা। কিন্তু এরকম একটা জায়গাতেও থাকে কয়েকশো মানুষ। ব্রান্ডি তাদের একজন।
ডেথ ভ্যালিতে মিজ স্টুয়ার্ট প্রায় পাঁচ বছর ধরে আছেন। কাজ করেন ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের কমিউনিকেশন বিভাগে। তিনি বলেন, এখানে এত গরম যে, আপনার গায়ে যে ঘাম হচ্ছে তা আপনি টেরই পাবেন না। খুব দ্রুত এটি বাস্প হয়ে উবে যাচ্ছে। ঘামে যখন কাপড় ভিজে যায়, সেটা টের পাওয়া যায়, কিন্তু গায়ের চামড়ায় ঘাম শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত। এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে আমার সময় লেগেছে। গ্রীস্মের সময় তাদের বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরেই কাটে। তবে অনেকে পাহাড়ের দিকে চলে যায়, যেখানে তাপমাত্রা একটু কম। যখন তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নীচে নামলে সেটাকেই মনে হয় খুব ঠান্ডা।
সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্য জেসন হেসার। তিনিও এই ফার্নেস ক্রীকেই থাকেন। তার বাড়ি মিনেসোটাতে। কাজ করেন এখানকার একটি গলফ কোর্সে। এটি বিশ্বে সমূদ্র সমতল থেকে সবচেয়ে নিচু কোন গলফকোর্স। তিনি বলেন, আমি দুবার ইরাকে ছিলাম। যদি ইরাকে থাকতে পারি, তাহলে ডেথ ভ্যালিতেও থাকা যায়। তিনি গলফ কোর্সে কাজ শুরু করেন ভোর পাঁচটার একটু আগে এবং দুপুর একটা পর্যন্ত।
জেসন গলফ জানান, যখন গরম আরও বেশি পড়বে, তখন আমাদের আরও ভোরে কাজ শুরু করতে হবে। একেবারে ভোর চারটায়। আর সেই ভোরেও কিন্তু তাপমাত্রা প্রায় ১০০-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭ দশমিক ৭ হতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। গলফ কোর্সটিকে নিপাট রাখার জন্য যে পানি দরকার, তা আসে একটি ভূগর্ভস্থ ঝর্ণা থেকে। যদি ঠাণ্ডা পানীয় থাকে, আপনাকে আগে সেটা পান করে নিতে হবে। নইলে গলফের মাঠ থেকে ফিরে কিন্তু দেখবেন সেটা আর ঠাণ্ডা নেই। আর আগে পান করে নিলে গলফ খেলাটাও জমে ভালো।
তবে ডেথ ভ্যালিতে গ্রীস্মের ভয়াবহ গরমের যে কষ্ট, সেটা কিছুটা পুষিয়ে দেয় শীতকাল।
এদিকে ১৬ আগস্টের তাপমাত্রাকে বলা হচ্ছে বিশ্বের এ যাবৎকালের নির্ভরযোগ্যভাবে যত তাপমাত্রা মাপা হয়েছে, তার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। রেকর্ড বইতে অবশ্য এর চেয়ে উঁচু দুটি তাপমাত্রার কথা লেখা আছে। একটা এই ফার্নেস ক্রীকেই, ১৯১৩ সালে। তখন তাপমাত্রা নাকি চড়েছিল ১৩৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে (৫৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। দ্বিতীয়টি তিউনিসিয়ায় ১৯৩১ সালে। সেখানে রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩১ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। কিন্তু এই রেকর্ড সম্পর্কে জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের সংশয় আছে, তারা এসব তথ্যকে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য মনে করেন না।
বিবিসির আবহাওয়া বিভাগের সাইমন কিং বলেন, এ সময়কার বিজ্ঞানী এবং আবহাওয়াবিদরা মনে করেন ওই দুটি তাপমাত্রা যেভাবে মাপা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না। যখন ফারনেস ক্রীকে এরকম উচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, তখন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা সেটি আরো তদন্ত এবং যাচাই করে দেখে। তারা আরো অনেক তথ্যের সঙ্গে ব্যাপারটা মিলিয়ে দেখে।
১৯১৩ সালে ডেথ ভ্যালিতে রেকর্ড করা তাপমাত্রা নিয়ে কেন এই সংশয়, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই এলাকার আশে-পাশের অন্যান্য এলাকার রেকর্ডের সঙ্গে এটি মিলছিল না। ফার্নেস ক্রীকের তাপমাত্রা আশে-পাশের এলাকার চেয়ে প্রায় দুই বা তিন ডিগ্রি বেশি ছিল।
ক্রিসটোফার বার্ট আবহাওয়া বিষয়ক ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন। ১৯১৩ সালে ডেথ ভ্যালিতে রেকর্ড করা তাপমাত্রা নিয়ে কেন এই সংশয়, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই এলাকার আশে-পাশের অন্যান্য এলাকার রেকর্ডের সঙ্গে এটি মিলছিল না। ফার্নেস ক্রীকের তাপমাত্রা আশে-পাশের এলাকার চেয়ে প্রায় দুই বা তিন ডিগ্রি বেশি ছিল।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, তারা এটি যাচাই করার চেষ্টা করছে। তবে যদি এটি যাচাই করা সম্ভবও হয়, তারপরও তারা এটিকে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে গণ্য করবে। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে, ডেথ ভ্যালির চেয়েও হয়তো বেশি গরম পড়ছে বিশ্বের আরও কোন কোন জায়গায়। যারা নজর রাখেন, তারা এই দাবিকে গুরুত্ব দেন না। কারণ এসব জায়গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করার জন্য নির্ভরযোগ্য কোন আবহাওয়া কেন্দ্র নেই।
তিনি বলেন, আপাতত ফার্নেস ক্রীককেই বিশ্বের উষ্ণতম স্থান বলে আমাদের মেনে নিতে হবে।