প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ছে স্বর্ণ চোরাচালান
স্বর্ণের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সোনা চোরাচালানও। এতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বর্তমানে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৩ হাজার ৭১৬ টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিয়ত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। মাঝে মধ্যে বড় অভিযানে এই কারবারিদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকরে আবার বেরিয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে এসব অপরাধী শুধু স্বর্ণ চোরাচালানিই নয়, যুক্ত আরো নতুন নতুন চোরাকারবারে। স্বর্ণের দামের তারতম্যের সঙ্গে এধরনের কর্মকাণ্ডের বিরাট ভূমিকা রয়েছে বলেও মনে করা হয়। প্যান্টের ভেতর, কম্বলের ভেতর, পেটের ভেতর, বিমানের টয়লেটে, যাত্রীর জুতোর ভেতর, মানিব্যাগে, লাগেজে, হ্যাঙ্গার গেটে, বোর্ডিং ব্রিজ প্রভৃতি উপায়ে স্বর্ণের বার চোরাচালান হয়ে আসছে হরহামেশা।
চোরাচালানির উপর ইনভেস্টিগেশন ৩৬০ ডিগ্রি নামক টেলিভিশনের বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এদেশের অন্যতম একটি বড় পাচারকারী সিন্ডিকেট বেশ ক’বছর আগে সাভারের ভাগুঢ্যা এলাকা থেকে র্যাব-১ এর হাতে ধরা পড়ে। মাইক্রোবাসে করে ৭ কেজি ৯৯১ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার নিয়ে চার চোরাকারবারি অবৈধ পন্থায় বেনাপোল সীমান্তে পাচারের লক্ষ্যে রওনা হয়েছিলো। এদের মধ্যে ছিল তাপস মালাকার, তার স্ত্রী মন্টি মালাকার, দুলাল চন্দ্র দাস ও অন্য একজন। মামলা হয় সাভার থানায়। জানা গেছে, সাজাও হয়েছে এদের। এর আগে পলি রানী দাস নামে এক চোরাকারবারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ৪ কেজি ৪৬০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার সহ বিমানবন্দর কাস্টমসের হাতে ধরা পড়ে। আটক হওয়ার পর কাস্টম অ্যাক্ট ও স্বর্ণ চোরাচালান আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে উক্ত বন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন।
সাজা হওয়ার ঘটনা স্বস্তিদায়ক। তবে শাস্তি আরো কঠোর করলে এ ধরনের অপরাধ ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে মনে করে বিজ্ঞমহল।
কাস্টমস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, যতো সোনা ধরা পড়ছে, তার কয়েক গুণ বেশি সোনা পাচার হয়ে যাচ্ছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাচার কমবেশি হলেও তা পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। সোনা চোরাচালানের মামলা তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চোরাচালানে জড়িত ২৬টি চক্রকে পুলিশ শনাক্ত করেছে। এসব চক্রে রয়েছে একাধিক নেতা, মানি এক্সচেঞ্জ ও হুন্ডি ব্যবসায়ী। তথ্য মতে, চোরাই স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিমানবন্দর কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ও আর্মড পুলিশের কিছু অসাধু কর্মচারী ও কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে দুবাই ও ভারতের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জড়িত বলে জানা যায়। আর এসব চালান সাধারণত দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে আসে। বাংলাদেশি চক্রের সদস্যরা মূলত চোরাই সোনা প্রাপকের হাতে পৌঁছে দেয়ার কাজটি করেন। আবার অনেকে আছেন বেশি মুনাফার লোভে বিনিয়োগও করেন এসব কাজে। জানা গেছে, ভারতের বাজারে সোনার দাম বেশি থাকায় বাংলাদেশকে সোনা চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিরা। তাদের সঙ্গে আছেন বেশকিছু অসাধু সোনা ব্যবসায়ীও। সুত্র জানায়, শুধু ভারতে পাচারই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ বেশ কিছু এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী চোরাকারবারিদের কাছ থেকে স্বর্ণের বার সংগ্রহ করে থাকে। অন্যদিকে এসব চক্র দেশের অভ্যন্তরে স্বর্ণ পাচারের পর সড়কপথে প্রতিবেশী দেশে উচ্চমূল্যে স্বর্ণ পাচার করার সময় প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।