গণমুখী বাজেটের দাবীতে বাসদ সিলেট জেলা শাখার মানববন্ধন
২০২০-২০২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখান করে করোনা মহামারীতে কৃষি,স্বাস্হ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্হান, জীবন সুরক্ষাখাতে বরাদ্ধ বাড়ানোর দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগ শুক্রবার (১৯ জুন) বিকাল আম্বরখানাস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতীকী মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়।
মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে জেলা সমন্বয়ক আবুজাফরের সভাপতিত্বে ও জেলা সদস্য প্রণব জ্যোতি পালের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্হিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন সনজয় শর্মা,মামুন বেপারি, লাবলু মিয়া, তামিম আহমদ, শাকিল আহমদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা স্বাস্থ্য ঝুঁকির সাথে সাথে ঝাঁকুনি দিয়েছে অর্থনীতিকে। বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী দেশগুলো টিকে থাকা আর টিকিয়ে রাখা ব্যস্ত সময় পার করছে।প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য নয়।
বিশ্ব অর্থনীতি থেকে তো বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন নয়, আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার এই সময়ে বাজেট ২০২০-২১ উপস্থাপিত হয়েছে। এই বাজেট অনেকগুলো কারণে গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে।স্বাধীনতার ৫০ বছরে ৪৯তম বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত পরিসরে, স্বল্প সময়ে, আলোচনাও হবে কম সময় ধরে। করোনা পূর্বে অর্থনীতির বেসামাল দশা এবং করোনায় বেহাল দশা সামলে উঠা যাবে কি ভাবে তা নিয়ে আলোচনা চলছিল জোরেশোরে। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে যে বাজেট ঘোষণা হয়েছে শঙ্কা দূর করার চাইতে আশংকা ও আলোচনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই করোনা দুর্যোগে জনসহায়তামুলক, বেকার ও কর্মহীনদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য সেবার গুণগত মানোন্নয়ন, কৃষি সহায়তা, শ্রম বাজারে আসা ২২ লাখ শ্রম শক্তি এবং প্রায় ২০ লাখ ফিরে আসা প্রবাসীর কর্ম সংস্থান সৃষ্টি সহ অর্থনৈতিক দুর্দশা মোকাবিলার বাজেট হবে এই প্রত্যাশা ছিল। বাজেটের অর্থ সংস্থানের জন্য প্রগতিশীল কর নীতি অর্থাৎ যাদের আয় বেশি তাদের কর বেশি এই নীতির বাস্তবায়ন হওয়া দরকার ছিল কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি।
৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষিত হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় এবার ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজেট ঘোষিত হলেও সে অনুযায়ী কৃষি, স্বাস্থ্য, জন সুরক্ষা, শিক্ষা, গবেষণা, কর্মসংস্থান খাতে উল্লেখ যোগ্য বরাদ্দ বাড়ে নি। বরং জনপ্রশাসন (১৯ দশমিক ৯), সুদ পরিশোধ (১১ দশমিক ২), সামরিক (৬ দশমিক ১ ), আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা (৫ দশমিক ০) এই চার খাতে মোট বাজেটের ৪২ দশমিক ২ শতাংশ টাকা ব্যয় হবে আর শিক্ষা ও প্রযুক্তি ( ১৫ দশমিক ১), কৃষি ( ৫ দশমিক ৩), স্বাস্থ্য ( ৫ দশমিক ১), সামাজিক নিরাপত্তা (৫ দশমিক ৬ ) এই চারটি প্রধান খাতে ব্যয় হবে ৩১ দশমিক ১ শতাংশ টাকা। বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ও খাত দেখলেই বুঝতে অসুবিধা হয় না রাষ্ট্রের নজরটা কাদের দিকে।
দেশে একদল উচ্চবিত্ত ও ধনী মানুষের উত্থান ঘটেছে। তারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন বেশি, পানিও তারা বেশি ব্যবহার করেন, রাস্তা ঘাটে তারাই গাড়ি চালান, অর্থাৎ জনগণের করের টাকায় এবং শ্রমে যা কিছু উৎপাদিত হয় তার বেশি ব্যবহারের সুবিধা তারাই পান। ফলে তারা কর বেশি দেবেন এটাই স্বাভাবিক এবং অর্থনৈতিক সংকটে তাদের দায় বেশি নিতে হবে এটা যৌক্তিক। কিন্তু তারা রেয়াত পেলেন অর্থাৎ তাদের আগের চেয়ে কম কর দিতে হবে। উচ্চ আয়ের ক্ষেত্রে গত বাজেটে ৩০ শতাংশ কর ধার্য করা ছিল এবার সেটা কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে অথচ মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি আয় করল কর দিতে হবে।
দেশে ধনী দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে ক্রমাগত , করোনা দুর্যোগ ব্যবধান ও বৈষম্য আরও বাড়াবে। শ্রমজীবীদের আয়ের ৬২ শতাংশ টাকা খরচ হচ্ছে শুধু খাদ্য বাবদ। সাধারণ মানুষের আয় কমছে ব্যয় বাড়ছে, কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও ফসলের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত হচ্ছে না, বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না বরং প্রবাসীদের ফিরে আসার আশংকা তৈরি হয়েছে। দেশের বেকার এবং বিদেশ ফেরত কর্মহীনদের জন্য কি করা হবে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পুরনোদের কাজে ধরে রাখার কৌশল কি হবে এসব বিষয় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করলেও বাজেটে এই সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।
বক্তারা সংশোধিত বাজেটে কৃষি,স্বাস্হ্য,শিক্ষা,গবেষণা,জীবন সুরক্ষা,কর্মসংস্হান খাতে বরাদ্ধ বাড়ানোর দাবি করেন।