এলো খুশির ঈদ…
‘ও ভাই রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মতো মৃন্ময়ী রূপে মাহে রমজান শেষে ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। এক মাস কঠিন সংযম সাধনার পর মুসলিম জীবনে এক অনাবিল আনন্দের মহাসম্মিলন ঘটে ঈদে।
ঈদ মোবারক। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খূশী। বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে মানুষের মৃত্যুর মিছিল চলছে। বাংলাদেশেও এ মৃত্যুর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।
দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়াও এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ৩২ হাজারেরও বেশি।
সিলেটে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭শ’ মানুষ সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এতোকিছুর পরেও ঈদ আনন্দ নিয়ে এসেছে।
অন্যান্য উৎসব থেকে ঈদের পার্থক্য হল- সবাই এর অংশীদার। সবার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে রয়েছে অপার আনন্দ। ঈদের দিন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
ঈদের আগের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করি। অপরের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে সচেষ্ট হই। রোজার প্রধান লক্ষ্য ত্যাগ ও সংযম। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে তা হবে সবার জন্য কল্যাণকর।
এবার রমজান মাসে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক ছিল । আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা মরণপণ লড়াই করে যাচ্ছেন নগরবাসীকে সচেতন করতে।
হত্যা, ছিনতাই ও প্রতারণার ঘটনা ঘটলেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় তা কম হয়েছে।
আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক সমস্যা আছে, আছে অনেক সংকট। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ শরিক হয়। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রিয়জনকে নতুন পোশাক ও উপহার সামগ্রী কিনে দেয়। যারা সারাবছর জীর্ণ পোশাকে থাকে, তারাও ঈদের দিনে সন্তানদের গায়ে নতুন পোশাক পরাতে চায়। ঈদের আনন্দ কেবল একা ভোগ করলে হবে না, গরিব-দুঃখী মানুষকে তাতে শামিল করতে হবে। এটিও ইসলামের শিক্ষা। এ কারণেই ধনীদের জন্য জাকাত ফরজ করা হয়েছে।
ঈদের নামাজ আদায়ের আগেই ফিতরা দেয়ার নিয়ম। ফিতরার উদ্দেশ্য, দারিদ্র্যের কারণে যাতে কেউ আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করা। সচ্ছলরা সঠিক নিয়মে জাকাত-ফেতরা দান করলে দরিদ্ররাও ঈদের খুশির ভাগ পেতে পারে। রমজান সংযমের মাস হলেও অনেকে খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটার পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করেন। দরিদ্র স্বজন বা প্রতিবেশীর প্রতি অনেকে কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত থাকেন। এটি ইসলামের বিধানের পরিপন্থী। ঈদ উদযাপনের সময় আমাদের এ কথাটিও মনে রাখতে হবে।
ঈদ আসে সাম্যের দাওয়াত নিয়ে। অনেকে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাকে বড় করে দেখেন। এর মর্ম অনুধাবন করেন না। ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। ঈদুল ফিতরের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
সিলেটবাসীসহ দেশবাসী ও অনলাইন গণমাধ্যম কালের সিলেটের সকল পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, সংশ্লিষ্ট সংবাদদাতা, প্রতিনিধিসহ সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক।
মো. সুজন মিয়া
সম্পাদক ও প্রকাশ
কালের সিলেট ডটকম