সিয়াম সাধনার উপকারিতা
সিয়াম সাধনার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উপকারিতা অপরিসীম। যার কূল-কিনারা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। নিম্নে কতিপয় উপকারিতার কথা তুলে ধরা হলো। (ক) রোজা পাপাচার ও অবাঞ্ছিত কাজ হতে রোজাদারকে বিরত রাখে এবং তা মহান আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। হাদিসে কুদসিতে আছে আল্লাহপাক বলেন : রোজা কেবল আমারই জন্য, আমি এর প্রতিদান দেব। (খ) রোজা সিয়াম পালনকারীর দেহস্ত রোগ জীবাণু ধ্বংস করে ও শারীরিক সুস্থতা আনয়ন করে এবং মহান স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে অনুপ্রাণিত করে। (গ) সিয়াম সাধনা জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের উপায়। হাদিস শরীফে এসেছে : রমজান মাস আগমনে জাহান্নামের দরজাসমূহ একমাসের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। (ঘ) রোজা জান্নাতে প্রবেশের মোক্ষম উপায়। হাদিস শরীফে উক্ত হয়েছে : জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি দরজার নাম ‘রাইয়ান’। এই দরজা দিয়ে কেবলমাত্র রোজাদারগণই প্রবেশ করবে।
(ঙ) সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধিসহ ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও বিনম্র স্বভাবের গুণে-গুণান্বিত হওয়া যায় এবং এর দ্বারা অন্তরের যাবতীয় কুটিলতা ও মলিনতা দূরীভ‚ত হয় এবং একই সাথে মানবিক প্রশান্তি লাভের অন্যতম মাধ্যম। (চ) রোজা মহান আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের মোক্ষম উপায় এবং রোজার দ্বারা সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির চরিত্র বিধ্বংসী যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি অবদমিত হয়। (ছ) রোজাদার ব্যক্তির ওপর আল্লাহপাক অতিশয় সন্তুষ্ট থাকেন। তার যাবতীয় কার্যকলাপকে তিনি পছন্দ করেন। হাদিস শরীফে এসেছে: রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহপাকের নিকট মেশকের চেয়েও বেশি সুঘ্রাণ যুক্ত। অপর এক হাদিসে এসেছে : যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে, তাকে জাহান্নাম থেকে একশত বছরের দূরত্বে রাখা হবে। (জ) কেয়ামতের দিন রোজা সিয়াম পালনকারীর মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে। হাদিস শরীফে এসেছে : রোজা ফরিয়াদ করবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার এবং কুপ্রবৃত্তি চাহিদা থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।
(ঝ) রোজা মূলত : আত্মিক শৃঙ্খলা ও আধ্যাত্মিক শক্তির উন্নতি ও উৎকর্ষের একান্ত শোপান। রোজার মাধ্যমে অর্জিত আত্মিক শক্তি ও শিক্ষা প্রকৃত রোজা পালনকারীর সমগ্র জীবনে কল্যাণকর প্রভাব বিস্তার করে এবং একইসাথে সিয়াম সাধনা রোজাদারের মনে আল্লাহভীতি জাগ্রত করে, সংযম ও আত্মশুদ্ধি লাভে উদ্বুদ্ধ করে। (ঞ) সিয়াম সাধনা রোজাদারকে কঠোর সাধনায় অভ্যস্ত করে ও পুণ্যাশ্রয়ী চারিত্রিক দৃঢ়তায় উপণিত করে। এতে করে তার মুক্তি ও নিষ্কৃতি লাভের পথ সুগম হয়ে উঠে। (ট) রমজান মাসে শয়তানকে কারাবন্দি রাখা হয়। ফলে রোজাদারগণ মনের পরিপূর্ণ শান্তিসহ সিয়াম সাধনায় প্রবৃত্ত হতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে তাদের দেহ ও মনে এক অনাবিল শান্তি ও পরিতৃপ্তির ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে থাকে। পরিশেষে বলা যায় যে, মুমিন-মুসলমান বান্দাহগণ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহপাকের কৃপা ধন্য হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করে থাকেন। -আমীন।