‘মা’

এই পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ ‘মা’। মায়ের মুখই সবচেয়ে প্রিয়মুখ। তাইতো মাকে নিয়ে কবি রফিক আজাদ লিখেছেন- ‘আমার পিঠের ঠিক মাঝখানে সর্বক্ষণ আমি/অশ্রæজলে-ভেজা দুটি চোখ টের পাই-/চোখ দু’টি আমার মায়ের/যখন যেখানে যাই যুদ্ধ ও শান্তিতে-/নগরে-বন্দরে-গ্রামে শত্রু বা মিত্রের ঠিকানায়/উদ্বেগে আকুল, সিক্ত ঐ দু’টি চোখ/আমাকে আগলে রাখে, চোখে-চোখে রাখে!’

আজ মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার, বিশ্ব মা দিবস। করোনার কারণে এবারের মা দিবসে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই ঘরবন্দি। এমন অবস্থায় বাইরে বের হওয়া ও মায়ের জন্য উপহারের কেনাকাটা করাও নিরাপদ নয়। কার্যত লকডাউনের মধ্যেই সারা পৃথিবী এবার মা দিবস পালন করবে। মাকে ভালোবাসা জানাতে কোনো দিনক্ষণ লাগে না। তবুও মায়ের জন্য ভালোবাসা জানানোর দিন আজ। মা দিবসের উদ্দেশ্য, প্রতিটি মাকে যথাযথ সম্মান দেয়া। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেয়া। যিনি জন্ম দিয়েছেন, লালন-পালন করেছেন- সেই মা অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলিত। ঘরে-বাইরে সর্বেক্ষত্রে মায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষেই দেশে দেশে মা দিবস পালন করা হয়। বিশ্ব মা দিবসের ইতিহাস শতবর্ষের পুরনো। যুক্তরাষ্ট্রে আনা জারভিস নামের এক নারী মায়েদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃ-দিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রবিবার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা।

তবে মা দিবস পালন নিয়ে উইকিপিডিয়া তুলে ধরেছে দুটি ইতিহাস। ‘মা দিবসের’ প্রচলন শুরু হয় প্রথম প্রাচীন গ্রিসে। সেখানে প্রতি বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’ যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিণী তার উদ্দেশ্য উদযাপন করা হতো। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় ‘মা দিবস’ পালিত হতো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। রোমানরা পালন করতেন ১৫ মার্চ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে। তারা দিনটিকে উৎসর্গ করেছিলেন ‘জুনো’র প্রতি। ষোড়শ শতাব্দী থেকে এই দিনটি যুক্তরাজ্যেও উদযাপন করা হতো ‘মাদারিং সানডে’ হিসেবে। ইস্টার সানডের ঠিক তিন সপ্তাহ আগের রবিবার এটি পালন করেন তারা।

অন্য ইতিহাস হলো- সর্ব প্রথম ১৯১১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আমেরিকাজুড়ে মায়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ‘মাদারিং সানডে’ নামে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করা হয়। এরপর আমেরিকার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে মা দিবসটি সর্বজনীন করে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে আসেন জুলিয়া ওয়ার্ড নামের এক আমেরিকান। ১৮৭২ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার নিজের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে জুলিয়া ওয়ার্ড নিজে ‘মা দিবস’ পালন করেন। ১৯১৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। এরপর পৃথিবীর দেশে দেশে মা দিবস পালনের রেওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে।

মাকে স্মরণ করে জগদ্বিখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, ‘আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি, অথবা যা হতে আশা করি, তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী’।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ