জানাজা পড়ালেন ইউএনও, কবর খুঁড়ল পুলিশ
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল শনিবার মারা যান ৬৫ বছরের এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে হলেও থাকতেন ফরিদপুরের মধুখালীতে। করোনা উপসর্গে মারা যাওয়ায় পরীক্ষা করার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়।
কিন্তু ওই মানুষটির লাশ আনার খবরে তার নিজ গ্রাম খাজুরার লোকজন যেন উধাও। সেখানে পৌঁছে গাড়ি থেকে লাশ নামানোর লোক নেই, খাটিয়া নেই। কাউকে না পেয়ে প্রায় পৌঁনে এক কিলোমিটার দূরের একটি মসজিদ থেকে খাটিয়া আর দুজন লোক আনে পুলিশ।
শুধু তাই নয়, লাশের জন্য কবর খোঁড়া এবং দাফনের কাজ পুরোটাই সম্পন্ন করেছে পুলিশ। আর ওই লাশের জানাজা পড়িয়েছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বদরুদ্দোজা শুভ।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা এবং ওই এলাকার প্রশাসন সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গ্রামের ঠিকানায় অ্যাম্বুলেন্স করে লাশ নিয়ে রওয়ানা হন মৃতের ভাই। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মো. মিজানুর রহমানকে। খবর পেয়ে প্রস্তুতি নেয় ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশ।
লাশ আনতে যাওয়া মরহুমের ভাই পথিমধ্যে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসিকে ফোনে জানান, তার ভাইকে খাজুরা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে চান। শনিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি সদর থানা এলাকায় পৌঁছায়। তখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল, ঝিনাইদহ এবং সদর থানার ওসি মিলে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে খাজুরা গ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হন। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে লাশ নিয়ে খাজুরা গ্রামে পৌঁছায় পুলিশ। এদিকে খবর পেয়ে সেখানে যান ইউএনও মো. বদরুদ্দোজা শুভ।
গ্রামে করোনা সন্দেহে মৃত ব্যক্তির লাশ আনার খবরে খাজুরা গ্রামের লোকজন কেউই আসছিলেন না। সেখানে পৌঁছে লাশ গাড়ি থেকে নামানোর লোক নেই। পরে প্রায় পৌঁনে এক কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদ থেকে খাটিয়া আর দুজন লোক আনে পুলিশ।
এরপর পুলিশ মৃত ব্যক্তির ভাইয়ের সঙ্গে মিলে লাশটি খাটিয়াতে রাখেন পুলিশ সদস্যরা। লাশ কাঁধে করে কবরস্থানের অদূরে একটি মাঠেও নিয়ে যান তারা। জানাজা পড়ানোর জন্য উপযুক্ত কাউকে না পেয়ে ইউএনও নিজেই জানাজা পড়ান।
পুলিশ জানায়, এরপর মৃতের ভাই ও অন্যান্য লোকদের সহায়তার লাশটি কবরস্থানে বহন করে নিয়ে যায় পুলিশ। বাঁশ গাছের নিচে কবরস্থান। কবর খুঁড়তে খুড়তেই সন্ধ্যা নেমে আসে। মোবাইল ফোনের টর্চের আলোতে চলে কবর খোঁড়ার কাজ। কিন্তু কবর খোঁড়া যখন শেষের দিকে তখন শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি। আর সেই ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করেছে পুলিশ সদস্যরা।
(সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়)