করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮৪২১
বিশ্বের ১৭০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। গতকাল রাত পর্যন্ত এতে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৮ হাজার ৪২১ জন মানুষ। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৮ হাজার ২৭৩ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮২ হাজার ৯০২ জন। করোনাভাইরাসের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। বুধবার সেখানে এই ভাইরাসে নতুন আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ১৩ জন। আর মারা গেছে মাত্র ১১ জন। তবে চীনের বাইরে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে।
ওয়ার্ল্ড ওমিটারস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বুধবার এই খবর লেখা পর্যন্ত সারাবিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯৬৬ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৪ জন আক্রান্ত হয়েছে স্পেনে। জার্মানিতে এক হাজার ৯৩৫ জন। ইরানে এক হাজার ১৯২ জন। এছাড়া যুক্তরাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬৭৬ জন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে নতুন প্রাণহানির সংখ্যা ৩০৫। এর মধ্যে ইরানে ১৪৭ ও স্পেনে ৯০ জন ও নেদারল্যান্ডসে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চীনের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইতালিতে। দেশটিতে ৩১ হাজার ৫০৬ জন মানুষ আক্রান্ত হওয়ার বিপরীতে মারা গেছেন ২ হাজার ৫০৩ জন। ইরানে ১৭ হাজার ৩৬১ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আর মারা গেছে এক হাজার ১৩৫ জন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা, জরুরি নয় এমন যান চলাচলের জন্য তাদের দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বন্ধ করে দিতে সম্মত হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে বিশ্বের বহু দেশে সীমান্ত এলাকায় যান ও লোক চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এক টুইট বার্তায় মি. ট্রাম্প বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর এর কোন প্রভাব পড়বে না। গত মঙ্গলবার কানাডার উপ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এই সীমান্ত দুদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার সব কয়টি অঙ্গরাজ্যেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
ইইউর অনেক সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সীমান্ত দিয়ে অবাধ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বেলজিয়াম সবশেষ ইউরোপিয়ান দেশ যেখানে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে অর্থাৎ লোকজনের শুধু কর্মস্থল এবং জরুরি প্রয়োজনে দোকানপাট ছাড়া প্রকাশ্যস্থানে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাকিস্তান এবং নেপাল আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। নেপাল ইউরোপসহ বেশ কিছু দেশ থেকে যাত্রীদের আগমন নিষিদ্ধ করেছে। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বলেছে, সে দেশে ঢুকতে গেলে বিদেশি বিমান যাত্রীদের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে যে তারা করোনামুক্ত। শ্রীলঙ্কাও বাইরের কোন দেশ থেকে কোন লোককে সেদেশে ঢুকতে দিচ্ছে না।
ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা এখনও বলা হচ্ছে দেড়শ’র কম, যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন দেশটিতে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা যথেষ্ট পরিমাণে না হওয়ায় অনেক সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়ছে না। ভারতের সব রাজ্যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেক রাজ্যে সিনেমা, থিয়েটারসহ পর্যটনস্থলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কলম্বোয় বাইরের কোন দেশ থেকে কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বলছে ১০০টিরও বেশি দেশে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮৪ কোটি ৯০ লাখ কিশোর ও তরুণ ক্লাস করতে পারছে না বলে জানাচ্ছে জাতিসংঘ।
এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে চীনে। সেখানে চেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু অর্থাৎ ২৩ কোটি ৩০ লাখ শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। সেখানে স্কুলে যেতে পারছে না ৪ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর আক্রান্ত দেশগুলোর অর্থনীতি এখন বিপুল এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা ইতিমধ্যেই শত শত কোটি ডলার সমপরিমাণের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এসব পদক্ষেপ অন্তত এখনও পর্যন্ত শেয়ারবাজারের অব্যাহত নিম্নগতি ঠেকাতে পারছে না।