পাপিয়ার যত কাণ্ড
বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। রবিবার বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এরআগে, গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে গোপনে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে র্যাবের জালে ধরা পড়েন। সঙ্গে আটক হয় তার তিন সহকারীও। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী ও তার অবৈধ আয়ের হিসাবরক্ষক মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন, পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শেখ তায়্যিবা ও সাব্বির খন্দকার। তাদের কাছে পাওয়া গেছে সাতটি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার ও সাতটি মোবাইল ফোন। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা, অর্থ পাচারসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল। কে এই পাপিয়া? শামীমা নূর পাপিয়া। ডাক নাম পিউ। নরসিংদী জেলা মহিলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। স্বামী মফিজুর রহমান সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন। এক সময় নরসিংদী জেলার ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। রাজনীতিতে প্রয়াত মেয়র লোকমানের অনুসারী ছিলেন তিনি। হত্যার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দলীয় পদপদবি, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা আর ব্লাকমেইলিং- এই তিনে মিলে অপরাধ সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন এই দম্পতি। সমাজ সেবার আড়ালে অসহায় দেহব্যবসা, গোপন ভিডিও ধারণ করে প্রভাবশালীদের ব্লাকমেইলিং, অস্ত্র-মদের ব্যবসা, জাল টাকা- এসব করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন পাপিয়া। চলাফেরায় ছিলো রাজকীয় ভাব। বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন। ঢাকায় রয়েছে অভিজাত ফ্ল্যাট। নিজ জেলা নরসিংদী গেলে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে স্বাগত জানাতো তাদের পোষা বাহিনী। এসব মোটরসাইকেলও সরবরাহ করেছেন পাপিয়া। ফাইভ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে নিজ এলাকাতেও খুলেছিলেন দেহব্যবসালয়। তাদের অবৈধ এসব ব্যবসা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রসার লাভ করে। তবে শেষরক্ষা হয়নি তাদের। শনিবার সকালে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় শাহজালাল বিমানবন্দরে র্যাবের জালে ধরা পড়েছেন তারা। তাদের সঙ্গে আটক হয়েছেন তাদের দুই সহকারীও। আটক অন্য দু’জন হলো সাবিক্ষর খন্দকার (২৯), শেখ তায়্যিবা (২২)। আটকের সময় শুরুতে পাপিয়া নিজের দাপুটে অবস্থানের পরিচয় দেন। তবে কোনো কিছুতেই রেহাই পাননি এ যাত্রায়। পাপিয়া নিজেকে পরিচয় দিতেন ক্ষমতার রাঘববোয়ালদের কর্মী হিসেবে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে নেতাদের ফুল দিয়ে সেই ছবিরও অপব্যবহার করতেন। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। পাপিয়া পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসা চালাতেন। এগুলোই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরা এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদেরকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করতেন পাপিয়া। এরই মধ্যে পাপিয়ার কাছ থেকে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত অনেক ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করা হয়েছে। গোপন ক্যামেরায় মেয়েদের ছবি ধারণ করে তাদের নিয়মিতভাবে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়- পাপিয়া বসে আছেন বাইজিবাড়ির সর্দারনির মতো। তার হাতে মোটা একটি বেতের লাঠি। তার কব্জায় থাকা মেয়েরা কথা না শুনলে পেটাতেন। পাপিয়া একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে পাপিয়াকে গ্রেফতারের খবর জানিয়ে বলা হয়, গত তিন মাসে তিনি শুধু ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলেই বিল দিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। ওই হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট সব সময় তার নামে বরাদ্দ থাকত। হোটেলটির বারে তিনি প্রতিদিন বিল দিতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। অথচ বৈধভাবে তার বার্ষিক আয় মাত্র ১৯ লাখ টাকা।