সাহায্যের আবেদন চীনের
চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিজেদের ভুল আর ঘাটতির কথা স্বীকার করে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দ্যা পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি বলেছে, জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের আরও উন্নতি করতে হবে। এর মধ্যে বন্যপ্রাণীর বাজারে বড় ধরণের অভিযান চালানোর আদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে মেডিকেল সরঞ্জাম এবং সার্জিক্যাল মাস্ক প্রয়োজন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং জানান, এ মুহূর্তে চীনের জন্য জরুরিভিত্তিতে মেডিকেল মাস্ক, সুরক্ষা স্যুটস এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা চশমা দরকার।
গুয়াংডং-সহ দেশটির যেসব প্রদেশের বাসিন্দা ৩০ কোটিরও বেশি সেসব শহরে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর প্রত্যেকের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু দেশটির কারখানাগুলোর দিনে মাত্র ২ কোটি মাস্ক তৈরির সক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনের শিল্প-প্রতিষ্ঠানবিষয়ক বিভাগের মুখপাত্র তিয়ান ইউলং।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ ইউরোপ, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাস্ক আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, কাজাখিস্তান, হাঙ্গেরিসহ বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশ মেডিকেল সহায়তায় হাত বাড়িয়েছে।
উহানের নতুন এই ভাইরাস দেশটির অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান ভারি প্রভাব ফেলছে। চীনজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় থমকে গেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী বেশ কিছু কোম্পানি চীনে তাদের কল-কারখানার উৎপাদন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশ চীন ভ্রমণে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর সোমবার সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ (এসএসই) খোলা হয়। দিনের শুরুতেই সূচক পড়ে গেছে প্রায় আট শতাংশ; যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
শহরটির চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা রোগীদের সেবা দিতে হাঁপিয়ে উঠছেন। সোমবার দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া বলছে, ৮ হাজার ৩০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত ৬৮টি মেডিকেল টিমকে উহান থেকে হুবেইয়ে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে নতুন করে চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তীব্র চাপের মুখে চীন সরকার উহানে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করছে। মাত্র ১০ দিনে নির্মিত এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতালে সোমবার থেকে করোনার চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের পর এই ভাইরাসে দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে অন্তত ৪২৫ জনের। সোমবার পর্যন্ত নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৪৩৮ জনে।
ডিসেম্বরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল সোমবার একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক ৬৪ জন নিহত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের মাঝে সংক্রমণ ঘটিয়েছে নতুন এ ভাইরাস।
তখন থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ২৪টি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটে জরুরি অবস্থা জারির পর বিশ্বের অনেক দেশ চীন থেকে আসা মানুষদের প্রবেশে নজিরবিহীন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
চীনে এমন এক সময় এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটে; যখন লাখ লাখ চীনা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশে পাড়ি জমান নতুন চন্দ্রবর্ষ উদযাপনের জন্য। সপ্তাহব্যাপী নতুন চন্দ্রবর্ষ উদযাপন আনুষ্ঠানিকভাবে গত শুক্রবার শেষ হয়েছে। সংকট মোকাবিলায় দেশটির সরকার এক সপ্তাহের ছুটি বাড়িয়ে ১০ দিন করে।
এরই মধ্যে ২৫টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মরণব্যধী করোনাভাইরাস। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ চীন থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। চীন থেকে ফেরত আনার পর বেশ কয়েকটি দেশ নাগরিকদের কোয়ারান্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করেছে। চীনে বিমান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বেশ কিছু দেশের বিমান পরিবহন সংস্থা।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যথাযথ সহায়তা না করে সতর্কতা জারি করে নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলে সোমবার অভিযোগ করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হুয়া চুনিং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের কর্মকাণ্ড আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।