বিক্ষোভে উত্তাল বাগদাদ
মার্কিন বিরোধী গণ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বাগদাদে। মার্কিন বাগদাদের অধিবাসীরা ছাড়াও ইরাকের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে শিয়া, সুন্নি, কুর্দি ও আরব গোত্রগুলো এই মহাবিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন।
বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগের হাতেই রয়েছে আল্লাহু আকবর বা আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য খচিত ইরাকের জাতীয় পতাকা এবং বড় বড় ব্যানারে লেখা রয়েছে মার্কিন বিরোধী শ্লোগান। একটি ব্যানারে লেখা ছিল: ইরাক হচ্ছে নবী-রাসুলদের দেশ। অন্য একটিতে লেখা ছিল: জোর করে বের করে দেয়ার আগেই বের হয়ে যাও দখলদার মার্কিন সেনারা।
বাগদাদের তাহরির স্কোয়ার ও মার্কিন দূতাবাসের সামনেও সমবেত হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীরা শ্লোগান দিচ্ছেন: আমেরিকা ধ্বংস হোক, ইসরাইল ধ্বংস হোক। ইরাক থেকে এখনই বের হও মার্কিন সেনারা। নো টু আমেরিকা বা মার্কিনিদের প্রতি না।
ইরাকের আজকের শান্তিপূর্ণ মহাবিক্ষোভকে ১৯২০ সালে অনুষ্ঠিত ইরাকের ইসলামী বিপ্লব বা গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। সে সময় ইরাক ও ইরানের প্রখ্যাত শিয়া ও সুন্নি আলেমদের আহ্বানে ব্রিটিশ দখলদারির বিরুদ্ধে ইরাকের সর্বত্র গণ-প্রতিরোধ শুরু হয়।
ইরাকে আজকের গণ-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন দেশটির প্রধান প্রধান গোত্র-প্রধান এবং তাতে সমর্থন দিয়েছেন ইরাকের শিয়া ও সুন্নি ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এ মহাবিক্ষোভকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য মার্কিন উদ্যোগে সিরিয়া থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অনেক কর্মী ও সদস্যকে গোপনে বিমান ও হেলিকপ্টারযোগে ইরাকে আনা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে কোনো কোনো সূত্র। ইরাকের গণ-ভিত্তিক ও মার্কিন-বিরোধী সরকার গঠন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশটিতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করছিল মার্কিন সরকার ও তার আঞ্চলিক সেবাদাস কোনো কোনো সরকার। একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা লেবাননেও লক্ষ্য করা গেছে।
আজকের এই মার্কিন বিরোধী শান্তিপূর্ণ মহাবিক্ষোভ এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মার্কিন সন্ত্রাসী হামলায় সম্প্রতি বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে শহীদ হয়েছেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কুদস্ ব্রিগেডের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এবং ইরাকের পপুলার মবিলাইজেশন ইউনিট (পিএমইউ) নামক আধা-সামরিক বাহিনীর উপপ্রধান আবু মুহানদিস আল মাহদি। তাদেরকে মার্কিন মদদপুষ্ট দায়েশ বা আই-এস নামক ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বিধ্বস্ত করার মহানায়ক হিসেবে ইরাক, ইরান, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়াসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অভূতপূর্ব শ্রদ্ধা জানিয়েছে কোটি কোটি জনগণ। ইরান ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরাকে বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আইন আল আসাদ ধ্বংস করে দেয় ১৩টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইরানের এ হামলায় প্রায় ১০০ মার্কিন সন্ত্রাসী সেনা নিহত ও তাদের ২০০’রও বেশি সেনা আহত হয়। এ ঘটনার পর কাসেম সোলাইমানি বিশ্ব-জনমতের কাছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সফল মহানায়ক এবং ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা কুখ্যাত সন্ত্রাসী নেতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইরাকে কাসেম সোলাইমানির ওপর হামলা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং প্রকাশ্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। কারণ ইরাক সফররত সোলাইমানি ছিলেন ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় মেহমান। এর আগে মার্কিন হামলায় জনপ্রিয় ইরাকি আধা-সামরিক বাহিনী পিএমইউ বা হাশদ্ আশ শাবয়ি’র শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কমান্ডারসহ শত শত সদস্য শহীদ হন। আর এই প্রেক্ষাপটে ইরাকের জাতীয় সংসদ সেদেশ থেকে মার্কিন ও তার মিত্র জোটের সব সেনাদের ইরাক থেকে বের করে দেয়ার ঐতিহাসিক প্রস্তাব অনুমোদন করে। ইরাকে ১৬ বছর ধরে অবস্থান করছে দখলদার মার্কিন সেনারা। দেশটিতে এখনও মার্কিন সেনার সংখ্যা কয়েক হাজার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাগদাদের আজকের এই মহাবিক্ষোভে অংশ নেয়া ইরাকিদের সংখ্যা অন্তত কয়েক মিলিয়ন হবে। এ মহাবিক্ষোভকে মার্কিন সরকার ও তার আঞ্চলিক লেজুড়দের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক পরাজয় ও মার্কিনিদের প্রতি ইরাকিদের পদাঘাতের সমতুল্য বলে মনে করা হচ্ছে। এ মহাবিক্ষোভ ইরাকের জাতীয় সংহতি ও ঐক্য জোরদার করবে এবং এ অঞ্চলে মার্কিন-ইসরাইলি ষড়যন্ত্রগুলোকে বানচাল করবে বলে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করছেন। মার্কিন টেলিভিশন সিএনএন বাগদাদের আজকের মহাবিক্ষোভকে মার্কিন সরকারের জন্য দুঃস্বপ্ন বলে উল্লেখ করেছে।
আজকের এই মার্কিন বিরোধী মহাবিক্ষোভ এ অঞ্চলে মার্কিন সরকারের হস্তক্ষেপকামী, শোষণমূলক ও ষড়যন্ত্রকামী নীতির প্রতি জনগণের প্রবল ঘৃণা তুলে ধরেছে। আর এই গণ-অভ্যুত্থান এ অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামকে জোরদার করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।