৪ জনকে খুন করে যুবকের আত্মহত্যা, স্তব্ধ বড়লেখাবাসী
স্ত্রী, শাশুড়িসহ চারজনকে খুন করে আত্মহত্যা করেছেন নির্মল (৩০) নামে এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। এ অবিশ্বাস্য ঘটনায় পুরো এলাকায় যেন স্তব্ধতা বিরাজ করছে।
পাল্লাথল চা বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, নিহতদের লাশ ঘরের মেঝে ও উঠানে পড়ে রয়েছে। মাটিতে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী বাকরুদ্ধ। এলাকার মানুষজন লাশ দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন মানুষজন।
স্থানীয় বাসিন্দা লতা রানী কর্মকার বলেন,‘ ঘটনাটি সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনেছি। এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। এরকম ঘটনা কোনোদিন আমাদের এখানে ঘটেনি। আর যারা মারা গেছেন তাদের সাথে কারো কোনো বিরোধ ছিল না। এই ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ।’
নিহত জলি বুনার্জির বাবা বিষ্ণু বুনার্জীর কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি অন্য একটা চা বাগানে আমার আরেক মেয়ের সাথে থাকি। সকালে খবর পাই আমার স্ত্রী ও মেয়েসহ পাশের ঘরের আরও দুজনকে আমার মেয়ের জামাই কুপিয়ে হত্যা করেছে। পরে সে নিজে আত্মহত্যা করেছে।প্রায় একবছর আগে নির্মলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে জলির বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। আমি তাদের অনেক বুঝানোর চেষ্টা করতাম। কিন্তু তারা আমার কথা শোনত না।জলির আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। আগের পরিবারে তার এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার নাম চন্দনা। ঘটনার সময় সে ঘরে ছিল। পরে ভয়ে পালিয়ে প্রতিবেশী এক বাড়িতে সে আশ্রয় নেয়। নির্মল এই বাগানের নিয়মিত শ্রমিক ছিলেন না। তিনি আমাদের (শ্বশুড়) বাড়িতেই থাকতেন। ’
জানা গেছে, রবিবার ভোররাতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে নির্মল কর্মকারের সঙ্গে তার স্ত্রী জলি বুনার্জির ঝগড়া হয়। এরই জের ধরে তিনি জলিকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন। এসময় জলিকে বাঁচাতে তাঁর মা লক্ষ্মী বুনার্জি ও পাশের ঘরের বসন্ত ভৌমিক এবং বন্তের মেয়ে শিউলী ভৌমিক এগিয়ে এলে নির্মল তাদেরও কুপিয়ে হত্যা করেন। ঘটনার সময় কোনো মতে বেঁচে যায় ঘাতকের সৎ মেয়ে চন্দনা (৯)। চন্দনা দৌঁড়ে পালিয়ে গিয়ে চিৎকার দিলে আশাপাশের শ্রমিকরা বাড়ি ঘেরাও করেন। এ অবস্থায় নির্মল পালিয়ে যেতে পারেননি। ঘরের দরজা লাগিয়ে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে লাশ উদ্ধার করে বিকেলে থানায় নিয়ে আসে।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেকক্ষণ ঝগড়া হয়েছিল। এটা শুনেছি। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন।’