সৃষ্টির উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে ইহজগতের প্রতি লোভ লালসা
মানুষ যখন তার উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে, তখন সে উদ্ভ্রান্ত হয়ে যায়। সে কী করছে তা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন বিশেষ এক উদ্দেশ্যে যা আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে সূরা জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে মানুষ ও জিন সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন- ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।’
কিন্তু মানুষ তার উদ্দেশ্য ভুলে অন্য পথে হাঁটতে শুরু করেছে। সরল পথ ছেড়ে বাঁকা পথ অবলম্বন করছে। আর শয়তান তাকে বাঁকা পথ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে (ইবলিস) বলল, হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। আপনার মনোনীত বান্দারা ছাড়া (তাদের কোনো ক্ষতি আমি করতে পারব না)।(সূরা হিজর :৩৯-৪০)
মানুষ তার উদ্দেশ্য ভুলে অন্য পথে কেন হাঁটে? দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ। ইহজগতের প্রতি তার অতি লোভ তাকে অন্য পথে নিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন- প্রাচুর্যের লালসা তোমাদের গাফেল রেখেছে, এমনকি, তোমরা কবরস্থানে পৌঁছে যাও (সূরা আত- তাকাসূর :১-২) দুনিয়ার মোহ আমাদের সবকিছুই করতে বাধ্য করছে। সাদাকে কালো, কালোকে সাদা করতে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করি না। কখনও এ কথা ভাবার সুযোগ হয়নি- একদিন আমাকে আমার রবের সামনে দাঁড়াতে হবে। তিনি আমাকে সবকিছু জিজ্ঞেস করবেন। দুনিয়ায় লোকচক্ষুর আড়ালে যাই করি, তাঁর চোখ ফাঁকি দেওয়া অদৌ সম্ভব নয়। রাসুল (সা.) বলেন- সেই দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোনো আদম সন্তান তার পা এক কদমও নাড়াতে পারবে না; ১. ‘তুমি তোমার সারাজীবন কোন পথে কাটিয়েছ?’; ২. ‘যৌবনকালে কোন আমল করেছ?; ৩. ‘ধন-সম্পদ কোন পথে উপার্জন করেছ?’ এবং ৪. ‘কোন পথে ধনসম্পদ ব্যয় করেছ?’; ৫. ‘দীন ইসলাম সম্পর্কে যতটুকু জেনেছ, সেই অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছ। (তিরমিযি, হাদিস :২৪১৭)
আজ আমাদের সামনে সমাজের এমন কিছু চিত্র ভেসে ওঠে, তা দেখে সত্যিই নির্বাক হতে হয়। এটাও কি সম্ভব! মানুষ এতটাই নিচে নামতে পারে? তার থেকে মনুষ্যত্ব একদম হারিয়ে গেছে। এই করোনার সময়ে মানুষ যেখানে নিজেকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, সেখানে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করেই সনদ দেওয়ার ঘটনা আমাদের বিস্মত করে। অর্থের লোভে মানুষ এত নিকৃষ্ট কাজ করতে পারে! নকল সুরক্ষা সামগ্রীতে তারা তাদের দুনিয়াবি ফায়দা লুটছে। এগুলো সব দুনিয়ার লোভ। যা আজ থেকে বহু বছর আগে আমাদের প্রিয় নবী আমাদের বলে গেছেন, ‘দুনিয়ার মুহাব্বত সমস্ত গুনাহর মূল (জামেউল উসূল, হাদিস নং-২৬০৩) এ সবকিছুর অন্যতম কারণ দুনিয়ার প্রতি আমাদের অকল্পনীয় লোভ আর আমাদের উদ্দেশ্যহীন পথচলা।’
সংবাদপত্রে আমরা দেখেছি- করোনা পরীক্ষা না করেই টেস্ট রিপোর্ট দিত একটি হাসপাতাল। এ শিরোনাম দেখে যে কোনো সচেতন নাগরিকের চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার কথা। এরা মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবলীলায় তারা তাদের পার্থিব জীবনকে রঙিন করার হীন চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ রাসুল (সা.) আমাদের এ ব্যপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা সত্যের সাথে অসত্যের মিশ্রণ ঘটাবে না। জেনেশুনে সত্য গোপন করো না। (সূরাতুল বাকারাহ :৪২)। রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো, একজন মুমিন দুর্বল হওয়া কি স্বাভাবিক? তিনি বললেন- হ্যাঁ, হতে পারে। আবারও জিজ্ঞাসা করা হলো, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে? তিনি বললেন- হ্যাঁ। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, একজন মুমিন কি মিথ্যুক হতে পারে? তিনি বললেন- না। (সুনানুল বায়হাকি, হাদিস : ৪৮১২)।
এ ছাড়াও যারা বিভিন্ন পণ্যে ভেজাল মিশ্রণ করে, তারা অনেক সময় মিথ্যা শপথ করে বলে আল্লাহর কসম, এটি খাঁটি মাল। এভাবে মিথ্যা কসম করে পণ্য বিক্রয়কারী সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন হলো, যে তার ব্যবসায়িক পণ্য মিথ্যা কসম খেয়ে বিক্রি করে। (সাহিহ মুসলিম, হাদিস :১০৬)
শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এহেন গর্হিত কাজ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, যতদিন নাগরিক সচেতনতা ও খোদাভীরুতা আমাদের মাঝে ফিরে না আসবে। কারণ একমাত্র আল্লাহর ভয় মানুষকে তার পাপকর্ম থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে।