“সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন” নানা অজুহাতে প্রতারণা!
চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ। পরনে বোরকা। হাতে একটা ফাইল, ব্যাগ। ৪৫ বছর ঊর্ধ্ববয়সী নারী। সঙ্গে এক কিশোরী। তার হাতে প্ল্যাকার্ড। ‘সাহায্যের আবেদন। আমরা বাঁচতে চাই, আমি পড়াশোনা করতে চাই।
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।’ উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমণ্ডিসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় দেখা মেলে তাদের। সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করেন অনেকে। দিন, মাস যায়। কিন্তু এই সাহায্যের আবদার চলতেই থাকে। সাহায্যপ্রার্থী ওই নারীর নাম রুমি সুলতানা। সঙ্গী কিশোরী বন্যা। অসুস্থতাসহ নানা অজুহাতে অনেকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয় তারা। মূলত এটি একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রের আরো সদস্য রয়েছে, যারা মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন পরিচয়ে প্রতারণায় সহযোগিতা করে। রুমি সুলতানার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। বিষয়টি পৌঁছেছে থানা পুলিশ পর্যন্ত। ভুক্তভোগী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায়। জানা গেছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে নানা কৌশলে সহজ-সরল মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্র। প্রতারণা বুঝতে পারলেও করার কিছু থাকে না। এ সময় ওই চক্রের হয়ে অনেকেই হুমকি-ধমকি দেয় অভিযোগকারীকে। এ রকম প্রতারণার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। প্রায় এক মাস পূর্বের ঘটনা। উত্তরা ক্লাবের পাশের মোড়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসেছিলেন রুমি ও তার মেয়ে। বিষয়টি দেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশরাফুল তাদের খোঁজ নেন। স্বামী নেই। রুমি রোগাক্রান্ত। ঠিকমতো খাবার জুটে না। তার মেয়ে বন্যার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ জন্য আর্থিক সহযোগিতা দরকার। এ সময় নিজের অসুস্থতার জন্য সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখান রুমি। পরবর্তীতে পরিবারটিকে সহযোগিতা করতে হাত বাড়ান আশরাফুল ও তার ঘনিষ্ঠরা। ৯ই আগস্ট প্রায় ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। একটি বেসরকারি হাসপাতালে রুমিকে ডাক্তার দেখানো হয়। কিন্তু ডাক্তাররা কোনো রোগ পান না। ২০শে আগস্ট তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এনআইসি বিডিতে নেয়া হয়। ইসিজিতে কার্ডিয়াক অ্যাটাকের কোনো লক্ষণ পাননি চিকিৎসকরা। একইভাবে ২১শে আগস্ট সকালে আবারো ওই হাসপাতালে ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষা করার পর কোনো সমস্যা নেই বলে চিকিৎসকরা জানান। পরবর্তীতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানো হয়। চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ জানিয়ে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন।
এক পর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তির উদ্যোগ নেয়া হলে রুমি সেখানে ভর্তি হবেন না বলে জানান। তিনি নিজে চিকিৎসা করাবেন জানিয়ে নগদ টাকা চান। এতে সন্দেহ হলে ওই নারী সম্পর্কে আরো খোঁজ নেন আশরাফুল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন গোপালগঞ্জের মুকসেদপুরের ওই নারী মূলত একজন প্রতারক। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয় সে। এমনকি নিজের ব্যক্তিগত অনেক তথ্যও গোপন করে সে। রামপুরার বনশ্রীর ই ব্লকের দুই নম্বর সড়কের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তিনি। তার প্রতিবেশীরা জানান, সহযোগিতার টাকা দিয়ে বাসার বিলাসবহুল ফার্নিচার ক্রয় করে সে। শপিং করে। তার এসব বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে ক্ষুব্ধ হয় সে। নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেয় সাহায্যকারীদের। শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে শেরেবাংলানগর থানায় গত বৃহস্পতিবার জিডি করেছেন ভুক্তভোগী। উপ-পরিদর্শক আব্দুল বারিক জানান, ওই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একইভাবে রামপুরার উলন এলাকার বাসিন্দা রেহেনা, মহিমা, সাদিয়াসহ বেশ কয়েক নারীকে দেখা যায় প্রায় প্রতিদিনই হাতিরঝিল এলাকায় সাহায্য চান। সঙ্গে থাকে ছোট বাচ্চারাও। তারা নিজেদের অসুস্থতা, বিধবা নানা অজুহাতে সহযোগিতা চান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা প্রত্যেকেই স্বনির্ভর। বাড়তি আয়ের জন্যই রাস্তায় বেরিয়ে আর্থিক সহযোগিতা চান। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সাহায্য সহযোগিতার নামে অনেকে বাসাবাড়িতে ঢুকে চুরি-ডাকাতিও সংঘটিত করে। এ জন্য অচেনা কাউকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন পুলিশ কর্মকর্তারা।