সদরের সাথে বিভিন্ন উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়তে থাকায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। জেলা শহরের কিছু কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট ও বাড়িবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করলেও জেলার ছাতক দোয়ারাবাজার, তাহিরপর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লাসহ ১১টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। অনেক পরিবার নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। পানি বাড়ার কারণে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের উজ্বলপুর নামক স্থানে সড়ক ভেঙ্গে জেলা সদরের সাথে উপজেলা বাসির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, দিরাই-শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর ও ছাতক-দোয়ারার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এদিকে জেলা শহরের আশপাশের দুই শতাধিকের উপরে অসহায় পরিবার সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে আশ্রয় নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করেছেন। ইতিমধ্যে জেলার সব ক’টি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের কাজির পয়েন্ট, উকিলপাড়া, নতুনপাড়া, বড়পাড়া সাহেববাড়ি ঘাট, ষোলঘর হাজিপাড়া,জামতলাসহ অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়ি রাস্তাঘাটের পানি কিছুটা নামতে শুরু করলেও অধিকাংশ বাসাবাড়ি এখনো পানির নীচে রয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, উপজেলা সদরের আশ-পাশ ও হাওর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বন্যায় ‘কোথাও বুক পানি, কোথাও কোমর সমান পানি হয়েছে। অধিকাংশ বর্নর্তের ঘরে চাউল নাই, গ্যাসের চুলাও ডুবে গেছে। চুলা মেরামত করার মানুষ পাচ্ছেন না অনেকেই। লাখড়ি না থাকায় বহু পরিবাার নিউ উদ্যোগে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। এ সব ঘরে বয়ষ্ক ও শিশুদের নিয়ে রীতি মতো বিপাকে পড়েছেন বানবাসীরা। কেউ বাচ্চাদের ব্রেড দিয়ে কোন রকম সময় পাড় করছে।
এ দিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কোটি টাকার বেশি মাছের পোনা ভেসে গেছে। এছাড়াও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে অনেক। যা এখনো হিসাবের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে বেশি মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায়। এই উপজেলায় অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জানা যায়, গত বছর পাহাড়ি ঢলে ৬৯ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার ৩৪.৬৫ মে. টন মাছ এবং ১৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫ শত টাকার ২১ লক্ষ ৯৫ হাজার টি মাছের পোনা ভেসে যায়। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছিলো ৯ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৬০ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। ১৫.২১ হেক্টর আয়তনের ১১৭ টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। ৪০ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার ২০.৩৭৫ মে. মাছ এবং ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ১৪ লক্ষ টি মাছের পোনা ভেসে গিয়েছিল। এছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৭ লক্ষ টাকার ছিলো। দোয়ারাবাজার উপজেলায় মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছিলো ৭ লক্ষ টাকার। ৫.০৫ হেক্টর আয়তনের ৩১টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ লক্ষ টাকার ১ মে.টন মাছ এবং ৪ লক্ষ টাকার ৭ লক্ষ টি মাছের পোনা। জামালগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় মৎস্য চাষিরাও চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জামলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্ত বিশ্বজিত দেব বলেন, বন্যার্থদের মাঝে সরকারী সঞায়তা প্রদান চলমান রয়েছে। মৎস্য চাষিদের খোঁ নিয়ে পরবর্তীতে তাদের জন্য প্রযোজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, ‘আকষ্মিক পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় মৎস্য চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমি ইতিমধ্যেই অনেক এলাকায় খোঁজ নিয়ে তাদের সরকারি ভাবে সহযোগীতা করার চেষ্টা করছি। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় সূত্রে জানা যায় সোমবার আকাশের অবস্থা একটু ভাল থাকলেও জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়তে থাকায় জেলার প্রতিটি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং বন্যায় প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হযেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, বৃষ্টিপাতের পরিমান অনেকটা কম থাকায় বিভিন্ন জায়গাতে পানি কমতে শুরু করেছে। তিনি জানান জেলায় ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ১৪৮টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা দাড়িঁয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য ইতিমধ্যে ৪১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৯ লাখ টাকা বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাহী অফিসারের নিকট পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের অব্যাহত সহায়তাচলমান রয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় (জামালগঞ্জ-তাহিরপুর-ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে) সরে জমিন পরিদর্শন করে বন্যার্তদের খোঁজখবর নিচ্ছি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ