বড়লেখায় মাত্র ৩৫ মে. টন বোরো সংগৃহীত হয়েছে ৩০ দিনে

বড়লেখায় বোরোর বাম্পার ফলনেও সরকারী ধান সংগ্রহে ধস নেমেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে এবার ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রশাসনের নানামূখী পদক্ষেপ ও কড়া নজরদারীর কারণে ধান সরবরাহকারী অসাধু সিন্ডিকেটের কোমর ভেঙ্গে গেছে। এতে ধান সংগ্রহে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে সরকারীভাবে এবার ৭৪৩ মে. টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধান ক্রয় কর্মসুচি শুরুর ৩০ দিনে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৫ মে. টন।

জানা গেছে, এবার উপজেলার ১০ ইউনিয়নে বোরোর আবাদ হয় ৪ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে বেশি বোরো ধানের আবাদ হয় হাকালুকি হাওরপাড়ের বর্নি, তালিমপুর ও সুজানগর ইউনিয়নে। শিলাবৃষ্টি ও আগাম বন্যা না হওয়ায় প্রায় শতভাগ ধান উঠেছে কৃষকের গোলায়। বড়লেখায় এবার বোরোর মোট উৎপাদন হয়েছে ২৬ হাজার ২১৫ মেট্টিক টন। সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ৭৪৩ মে. টন ধান ক্রয়ের বরাদ্দ পাওয়া যায়। ধান বিক্রির জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ ১০৩১ জন কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত করে। গত ১২ মে লটারীর মাধ্যমে ৭৪৩ জন কৃষককে বাছাই করে উপজেলা খাদ্য ও কৃষি বিভাগ। ১৪ মে ধান ক্রয় কর্মসুচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ ও ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান। প্রতিদিন ১১ টন করে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার (১৩ জুন) পর্যন্ত ৩০ দিনে ধান সংগ্রহ হওয়ার কথা ৩৩০ মে. টন। কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৫ মে. টন।

সুত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বোরো ও আমন মৌসুমে খাদ্য গোদামে ধান সরবরাহ করেছে শাসক দলের কতিপয় নেতার প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের ইশারায় খাদ্যগোদামে ধান বিক্রি করতে আসা প্রকৃত কৃষকরা হয়রানীর শিকার হতেন। এতে তারা ধান বিক্রিতে নিরুৎসাহী হতেন। এ সুযোগে আসাধু সিন্ডিকেট কৃষিকার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করে ধান বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ জানান, প্রকৃত কৃষকরা যাতে ধান বিক্রি করতে পারে এজন্য বোরো ধান সংগ্রহে এবার উপজেলা প্রশাসন নানামূখি পদক্ষেপ গ্রহণ ও কড়া নজরদারী করছে। খাদ্যগোদামে সরকারী ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এবার এ সিন্ডিকেটের কোমর ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং কৃষকদের সঠিকভাবে উদ্বুদ্ধ না করায় সরকারী ধান সংগ্রহে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোস্তাক আহমদ জানান, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষক ধান শুকাতে পারছেন না। এজন্য গোদামে ধান কম আসছে। এছাড়া এবার ধানের বাজার দর চড়া থাকায় তালিকাভুক্ত অনেক কৃষক খাদ্য গোদামে বিক্রি না করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিকট ধান বিক্রি করছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম আল ইমরান জানান, উপজেলা কৃষি ও খাদ্য বিভাগকে নিয়ে তিনি সরকারের ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে ব্যাপক স্বচ্ছতা এনেছেন। প্রয়োজনে বরাদ্দের টাকা ফেরৎ পাঠাবেন তবুও প্রকৃত কৃষক ছাড়া অন্য কাউকে ধান সরবরাহ করতে দেয়া হবে না।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ