তামিম তাণ্ডবে টাইগারদের রানের পাহাড়
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে জ্বলে উঠলেন তামিম ইকবাল। তার ১৫৮ রানের ওপর ভর করে জিম্বাবুয়েকে বাংলাদেশ ছুঁড়ে দিলো ৩২৩ রানের বিশাল এক লক্ষ্য।
আগের ম্যাচে জ্বলে উঠেছিলেন লিটন। আজ জ্বলে উঠলেন আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল। ১৩৬ বলে তিনি খেললেন ১৫৮ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। মুশফিকুর রহীম খেলেছেন ৫৫ রানের ইনিংস। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে এলো ৪১ রান এবং শেষ মুহূর্তে মোহাম্মদ মিঠুন ১৮ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংসের পর নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশের রান দাঁড়িয়েছে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩২২, যা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।
দীর্ঘ ১৯ মাস আর ২৩ ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি তামিম ইকবাল। অবশেষে তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা বইলো। শুধু সেঞ্চুরি করাই নয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান হিসেবে নির্দিষ্ট এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন তিনি। তামিম আউট হলেন ১৫৮ রান করে। এর আগে তারই ইনিংস ছিল বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৫৪ রানের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই খেলেছিলেন সেই ইনিংসটি। এবার করলেন ৪ রান বেশি।
তামিম ইকবালের ১৩৬ বলে ১৫৮ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশও বড় ইনিংসের ভিত্তি পেয়ে যায়। তবে রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলার পর বিদায় নিতে হয়েছে তামিমকে। চার্ল মুম্বার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে মুতোমবদজির হাতে ধরা পড়েন তামিম। ২০টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কার মার ছিল তার ৩টি। ৪৫.৪ ওভারে তামিম যখন আউট হলেন, তখন বাংলাদেশের রান ২৯২।
তামিমের আগে আউট হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৫৭ বল খেলে তিনি করেছিলেন ৪১ রান। ৩টি বাউন্ডারির মার ছিল তার ব্যাটে। মেহেদী হাসান মিরাজ করেন ৫ রান। মাশরাফি ১ এবং তাইজুল ইসলাম আউট হন কোনো রান না করেই। শফিউল অপরাজিত ছিলেন ৫ রানে।
সোমবার দুপুর থেকেই অনিশ্চয়তায় ঘেরা ছিল মুশফিকুর রহীমের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলা। সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে আজ টসের সময় দেখা গেলো একাদশে নাম রয়েছে তার। নানা চ্যালেঞ্জের মুখে একাদশে থাকার অর্থ, নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করে দেখানো।
সেই তাগিদ থেকেই মুশফিক নিজেকে প্রমাণ করার মিশন নিয়ে নেমেছিলেন মাঠে। ওপেনার লিটন এবং ওয়ানডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হওয়ার পর মাঠে নেমে জুটি বাধেন তামিম ইকবালের সঙ্গে।
শুধু তাই নয়, ক্যারিয়ারে ৩৮তম হাফ সেঞ্চুরি করেই তবে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। তামিমের সঙ্গে ৮৭ রানের মূল্যবান জুটি গড়ার পথে ৪৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মুশফিক। এরপর তিনি আউট হন ৫০ বলে ৫৫ রান করে। ৬টি বাউন্ডারিতে তিনি সাজিয়েছিলেন নিজের ইনিংস।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৯ রানে রানআউট হয়ে যান লিটন দাস। প্রথম ম্যাচে করেছিলেন দুর্দান্ত একটি সেঞ্চুরি। ১০৫ বল খেলে ১২৬ রান করে ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠ ছেড়ে যান তিনি। সে ধারাবাহিকতা শুরু করার সুযোগই পেলেন না তিনি। তার আগেই দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হয়ে গেলেন তিনি।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর যথারীতি ঝড় তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। ৬.৩ ওভারেই তারা ৩৮ রানের জুটি গড়ে ফেলেন।
সপ্তম ওভারে চার্ল মুম্বার বলের সামনে ব্যাট করছিলেন তামিম ইকবাল। অন্যপ্রান্তে ব্যাট করছিলেন লিটন দাস। নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে শুরু করেন তামিম। লিটন কিছুটা রয়ে-সয়ে খেলছিলেন।
ওভারের তৃতীয় বলটি তামিমের ব্যাটে লেগে চলে আসে বোলারের হাতে। রান নেয়ার জন্য এ সময় ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন লিটন দাস। বল বোলার মুম্বার হাতে লেগে চলে যায় নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্পে। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় লিটন ক্রিজে পৌঁছার আগেই বল গিয়ে আঘাত হাতে স্ট্যাম্পে। যার ফলে আউট। ১৪ বলে ৯ রান করে আউট হয়ে গেলেন আগের ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা লিটন দাস।
দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হলেন নাজমুল হোসেন শান্তও। এ ক্ষেত্রে অবশ্য দোষ তামিম ইকবালের। ১১তম ওভারে ওয়েসলি মাধভেরে বল করেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। তার প্যাডে লেগে বল চলে শর্ট ফাইন লেগে। অন্য প্রান্ত থেকে রান নেয়ার জন্য দৌড় দেন তামিম। ফিল্ডারের হাতে বল থাকা সত্ত্বেও স্ট্রাকিং এন্ডের ক্রিজে পৌঁছে যান তিনি। শান্ত রান নিতে না চাইলেও ক্রিজের বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকেন। যার ফলে রান আউট হয়ে যান তিনিই।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে পড়ে গেলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেট। স্কোরবোর্ডে রান তখন ৬৫। নাজমুল হোসেন শান্ত ১০ বল খেলে করেন মাত্র ৬ রান।