ভাল আচরণ জীবনের সৌন্দর্য
কথায় বলে, সুন্দর ব্যবহার রত্নের চেয়েও মূল্যবান। ভাল ব্যবহার দুর্বলকে যোগায় শক্তি, দিশেহারাকে দেখায় পথ, অন্ধকারে জ্বালায় আলোর মশাল। হতাশা, ব্যর্থতা, গ্লানির তিক্ত অনুভূতিগুলো যখন ঘিরে ধরে তখন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সম্বল হয় একটু আশা, একটুখানি সম্ভাবনার হাতছানি।
“ব্যবহারে বংশের পরিচয়” কথাটা সর্বজন স্বীকৃত। খুব প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ। ব্যবহার মানুষকে অপর মানুষের সঙ্গে জীবন নিয়ে আলোচনা তোলে। মানুষকে মুগ্ধ করে! আকর্ষণ করে! ভালোবাসার মতবিনিময় করে। প্রেমের লেনদেন চলে। সবকিছুর মূলে আচার-ব্যবহার। অজানা-অচেনা, ভিন দেশি একজন মানুষও ভালো ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ে অপর ব্যক্তির প্রতি! সে হৃদয় গভীর থেকে স্ফীত স্বরে আওয়াজ করে “লোকটি খুব ভালো”।
সুন্দর ব্যবহারের কারণে যে মুখটি প্রিয় হয়, বিপরীতভাবে অসুন্দর ব্যবহার করায় একই মুখটি অপ্রিয় হয়ে যায়। তাই সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ ও সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। সুন্দর আচরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, পরকালে বিনিময় হিসেবে মেলে অনন্ত সুখের জান্নাত।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- “কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহতায়ালা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।” [সুনানে তিরমিজি]
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন-“সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো- আল্লাহতায়ালার ভয় ও সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে তা হলো- (মানুষের) মুখ এবং লজ্জাস্থান।” [সুনানে তিরমিজি]
হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন- “সুন্দর আচরণই নেক আমল।” [সহিহ মুসলিম]
প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেছেন-“তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন সে আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।”[ সুনানে তিরমিজি]
সুন্দর আচরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। যারা সবসময় মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলে, সুন্দর আচরণ করে তাদেরকে সমাজের সবাই অত্যন্ত পছন্দ করে, ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে আল্লাহতায়ালাও তাদের অত্যন্ত পছন্দ করেন। একটি ভালো কথা, সুন্দর আচরণ একটি ভালো গাছের মতো।
সুন্দর আচরণকারীর সামনে-পেছনে মানুষ তার প্রশংসা করে। তার জন্য মন খুলে দোয়া করে। ফলে আল্লাহ এবং আসমান-জমিনের ফেরেশতারাও তাকে অত্যন্ত পছন্দ করেন।
অপরদিকে খারাপ ব্যবহারে সম্পর্ক বিনষ্ট হয়। অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। সমাজের মানুষ তাকে অবহেলা, অবজ্ঞা ও ঘৃণার চোখে দেখে। তার কথার কোনো দাম থাকে না।
আমাদের নবী (সঃ) ছিলেন সদা-সত্যভাষী, হিতভাষী, শুদ্ধভাষী, সুভাষী এবং মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণকারী। তাই তিনি ছিলেন সব মানুষের সেরা। কারও সঙ্গে মুচকি হেসে কথা বলাই উত্তম আখলাক নয়। হ্যাঁ, এটাও উত্তম আখলাকের একটি অংশ। কিন্তু যদি এমন হয় যে, ওপরে ওপরে মুচকি হেসে কথা বলল, আর মন বিদ্বেষে পরিপূর্ণ থাকল- তাহলে সেটা হবে কৃত্রিমতা। এর মাঝে ইখলাস নেই এবং এটা মুমিনের শান ও নয়।
চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান হাসিল করা যায়। গোমরামুখী হওয়া কোনো তাকওয়ার পরিচয় বহন করে না। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায় অনেক সৎ চরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে! মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ! মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিয়ামতের দিন এমন লোককেও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে- যার আমলনামার মধ্যে নামাজ, রোজা, জাকাত প্রভৃতি নেক আমল থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তার মন্দ আচরণের জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। তাই মিষ্টি হাসি, মধুর আচরণ ও কোমল চিত্তের অধিকারী হওয়া পরিবার প্রধান ও সমাজ সংস্কারকদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন এমন সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। শেষ করছি ‘আবদুল্লাহ্ আল-নিটাব খাঁন’ এর
‘আচরণ’ কবিতার কয়েকটি পংক্তি দিয়ে-
“অন্তরে শুদ্ধতা আনো, মুখে আনো মিষ্টতা,
হাঁসি তামাশার ছলে ও বলোনা কটু কথা।
তেমনি করো আচরণ, যেমন করো আশা,
সংযত করো ক্রোধ, নম্র শালীন করো ভাষা।”
লেখকঃ প্রাবন্ধিক।