চীনে ভাইরাসে ১৭ জনের মৃত্যু, গণপরিবহন বন্ধ

চীনজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রহস্যময় এক ধরনের ভাইরাসের কারণে এবার উহান শহরের সব গণপরিবহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শহরের বাসিন্দাদেরও শহর ত্যাগে নিষেধ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এই ভাইরাসে অন্তত ৫০০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এর আগে উহান শহরে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয় দেশটির সরকার। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শহরের বাসিন্দাদের ভিড়ের মধ্যে না যেতে বা গণজমায়েত না হতেও পরামর্শ দিয়েছে। এমন সময় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হলো, যখন লাখো চীনা নাগরিক চান্দ্রবর্ষ বরণ উপলক্ষে বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করছেন। উহান শহরে ৮৯ লাখ মানুষের বাস।

দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে চীনের পার্শ্ববর্তী জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডে ছড়িয়েছে ভাইরাসটি। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রেও এই ভাইরাসে সংক্রমিত একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (সার্স) মতো এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে।

চীনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ভাইরাসটির ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে এই প্রদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে সরকার। এ ছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নির্ধারণে গতকাল বৈঠক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে, তিনি সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করেছেন। চীন থেকে ফেরার পর গত শনিবার ও রোববার অসুস্থ ছিলেন তিনি। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেছে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীনের হুবেই প্রদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া উহান থেকে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন, তাঁদের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

১৯৬০ সালে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এটি মূলত ভাইরাসের বড় একটি গোত্র। বর্তমানে করোনাভাইরাসের যে প্রজাতির সংক্রমণ ঘটেছে, তা এর আগে দেখা যায়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ভাইরাসের সংক্রমণে সাধারণ সর্দি-ঠান্ডা থেকে শুরু করে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) পর্যন্ত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি মানুষ এবং পশু—উভয়ে ছড়াতে পারে। কোনো রকম স্পর্শ ছাড়াই মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় ভাইরাসটি। ফ্রান্সের প্যারিসের ইনস্টিটিউট প্যাস্তয়োয়ের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান আর্নদ ফন্তানেত বলেন, সার্স ভাইরাসের সঙ্গে বর্তমান ভাইরাসটির চরিত্রের ৮০ শতাংশ মিল রয়েছে। তবে সার্সের মতো আগ্রাসী নয় এই ভাইরাস।

‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর খবরে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শ্বাসকষ্ট হয়। অনেক রোগীর জ্বর ও কফ হয়। এটি মারাত্মক আকার ধারণ করলে রোগীর নিউমোনিয়া হতে পারে। ব্রংকাইটিসও হতে পারে এর সংক্রমণে। এ ছাড়া কিডনি অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা আছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ