সদকা ও সদকায়ে জারিয়া মানে কি? কোরআন ও হাদিসে গুরুত্ব

সদকায়ে জারিয়া আরবি শব্দ। সদকা শব্দের অর্থ দান করা এবং জারিয়া অর্থ প্রবহমান, চলমান।
সদকায়ে জারিয়া হলো- এমন দান যার কার্যকারিতা কখনো শেষ হবে না এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ এই পৃথিবী যত দিন থাকবে তত দিন পর্যন্ত কবরে শুয়ে শুয়ে সদকাকারী ব্যক্তি এর সওয়াব পেতেই থাকবেন। নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেন-‘যখন আদম সন্তান মারা যায় তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি বিষয় ব্যতীত। ১. সদকায়ে জারিয়াহ্, ২. এমন ইলম বা জ্ঞান যা দ্বারা মানব জাতি উপকৃত হয়, ৩. এমন সুসন্তান যে তার জন্য দো‘আ করে। [মুসলিম শরীফ]
ইসলামি পরিভাষায় দান করাকেই সদকা বলা হয়।অনেকেই মনে করে যে, টাকা পয়সা দান করার নামই হচ্ছে সদকা। সুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সব নেক কাজই সদকা।’ (সহিহ বুখারি: ৬০২১) মানুষের সাথে ভাল আচরণ করা, ধৈর্য ধারণ করা, ক্ষমা করা, সহনশীলতা, পরপোকারী হওয়া, কারো প্রতি সৎ কাজের আদেশ ও উপদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ ও বাধা প্রদান সদকা, কোনো মানুষকে পথ হারাবার জায়গায় পথ দেখানো সদকা, রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড্ডি সরানোও সদকা, নিজের বালতি থেকে ভাইয়ের বালতিতে পানি ভরে দেওয়াও সদকা।
প্রত্যেক মোমিনের উচিত সদকায়ে জারিয়ার আমলের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা। তবে দান কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নয় বরং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে করতে হবে। পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী নয়। সবাইকে চলে যেতে হয়। যাওয়ার সময় কেউ সঙ্গে যাবে না। যাবে শুধু নিজের আমল। কিয়ামতের দিন কঠিন সময়ে তারাই মুক্তি ও সফলকাম হবে যাদের সৎ আমলের পাল্লা ভারি হবে। আর সৎ আমলের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে দান।
★কোরআনে দান-সদকার গুরুত্ব
*আল্লাহ তাআলা কোরআনুল করীমে ফরমানঃ হে ঈমানদারগণ! আমার দেওয়া রিজিকের কিয়াদাংশ দান করে দাও এমন এক মহা সংকটপুর্ণ দিন আসার পূর্বে যে দিন না কোন বেচা কিনা চলবে, না কোন বন্ধুত্ব কাজে আসবে এবং আল্লাহর অনুমতি ভিন্ন না কোন সুপারিশের সুযোগ হবে। –সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৪।
*আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ এবং তোমরা যারা আল্লাহর রাস্তায় দান করবে উহার প্রতিদান তোমাদিগকে পুরাপুরি দেয়া হবে। আর তোমাদের প্রতি কোনপ্রকার জুলুম করা হবে না। -সুরা আনফাল, আয়াতঃ৬০।
*আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যারা আপন ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তাদের দৃষ্টান্ত হলো ঐ দানার মত যেখান হতে এরূপ সাতটি ছড়া বের হলো যার প্রত্যেকটিতে একশত করে দানা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। -সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬১।
*আল্লাহ তাআলা চিরন্তন সত্য কোরআনুল করীমে ফরমানঃ যাহারা আল্লাহর মাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে অতঃপর দান গ্রহিতার প্রতি কোন প্রকার খোঁটাও দেয় না অথবা কটু কথাও বলে না, স্বীয় প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য প্রতিদান রয়েছে। কেয়ামতের দিন তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন প্রকার চিন্তাযুক্তও হবে না। -সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২৬২।
*আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ ফরমানঃ যারা স্বীয় ধন-সম্পদ রাত্রে এবং দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে দান করে থাকে তাদের প্রতিদান আপন প্রতিপালকের নিকট সুরক্ষিত থাকবে, আর তারা ভয়শূন্য ও চিন্তা মুক্ত থাকবে। -সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২৭৪।
★হাদিসে দান-সদকার গুরুত্ব
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যখন মানুষ মারা যায়, তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল (এর সওয়ব) বন্ধ হয় না। তা হল- সদকায়ে জারিয়া, ইলম-যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয় এবং তার নেককার সন্তান যে তার জন্য দুআ করে। -মুসলিম, তিরমিযী।
*হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে কোন মুসলমান অন্য কোন মুসলমানকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিধান করাবেন। যে কোন মুসলমান অন্য কোন ক্ষুধার্ত মুসলমানকে আহার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল থেকে আহার করাবেন। যে কোন মুসলমান অন্য কোন পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তাকে ‘রহীকে মাখতুম’ থেকে পান করাবেন। -আবু দাউদ।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সদকা সম্পদকে হ্রাস করে না, ক্ষমা করা দ্বারা আল্লাহ বান্দার ইজ্জত বৃদ্ধি করেন; আর কেউ আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে বিনয় অবলম্বন করলে আল্লাহ তার মর্যাদাকে উঁচু করে দেন। -মুসলিম, তিরমিযি।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমানঃ দাতা ব্যক্তি আল্লাহরও নিকটে, জান্নাতেরও নিকটে, মানুষেরও নিকটে; অথচ জাহান্নাম থেকে দূরে। পক্ষান্তরে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ থেকেও দূরে, জান্নাত থেকেও দূরে, মানুষ থেকেও দূরে; অথচ জাহান্নামের নিকটে। নিশ্চয়ই মূর্খ দাতা, কৃপণ ইবাদাতকারীর চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। -তিরমিযী।
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলমান সওয়াবের নিয়তে তার আল-আওলাদের প্রয়োজনে ব্যয় করে, তখন তা (আল্লাহর নিকট) সদকা হিসাবে গণ্য হয়। -বুখারী, মুসলিম। আল্লাহজাল্লাশানহু আমাদেরকে হেফাজত করুণ, কৃপণতা থেকে রক্ষা করুণ এবং বেশী থেকে বেশী দান-সদকা করার তৌফিক দিন!

ওমা তৌফিকি ইল্লাহ বিল।

Mujibkoyru@gmail.com

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ