রোজা ভঙ্গের ওযরসমূহ
পরহেজগারিতা অবলম্বনের অনন্য উপায় হিসেবে রমজানের রোজাকে পবিত্র কুরআনের ‘কুতিবা’ শব্দের মাধ্যমে ফরজ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’। অর্থাৎ, মানুষেরা যাতে পরহেজগারিতা অর্জন করতে পারে।যথাযথভাবে রোজা পালনের মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি।
বিনা-কারণে যদি কেউ এ রোজা ভঙ্গ করে, তার জন্যে রয়েছে দুনিয়া-আখিরাতে লাঞ্ছনা! তাই ইচ্ছাকৃত যদি কেউ রোজা ভঙ্গ করে, তার উপর কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়। আর অনিচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে কারো রোজা ভঙ্গ করতে হলে তার উপর কেবলই কাজা ওয়াজিব।
রমজানে রোজা ভঙ্গ করা হারাম ও বড় গুনাহ। কিন্তু এমন কিছু ওযর আছে যার কারণে রমজানে রোজা ভঙ্গ করা যাবে, আসুন জেনে নিই কোন ওযরের কারণে রমজানে রোজা ভঙ্গ করা বৈধ।
অসুস্থতা
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা বৈধ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।’ [সূরা আল বাকারা:১৮৪]
যে অসুস্থতার কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা চলে তা হলো এমন অসুস্থতা যার কারণে রোজা রাখা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় অথবা রোজা রাখলে নিশ্চিত ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
যদি অসুস্থ ব্যক্তি রোজা ভঙ্গ করে আর তার অসুস্থতা এমন হয় যা সুস্থ হবে বলে আশা থাকে, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর যেসব রোজা ছুটে গেছে তা কাযা করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।’ [সূরা আল বাকারা:১৮৪]
যে রোগ ভালো হওয়ার আশা নেই – যেমন জীবনব্যাপী অসুস্থতা অথবা এমন বার্ধাক্য।
যার কারণে ব্যক্তি স্থায়ীভাবে রোজা রাখতে অপারগ হয়ে যায় – এমতাবস্থায় প্রতিদিনের রোজার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে অর্ধ সা’ চাউল অথবা অন্যকোনো দেশীয় খাবার দান করতে হবে।
সফর
মুসাফির ব্যক্তির জন্য রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা বৈধ। তবে ভাঙ্গা রোজাগুলো পরবর্তীতে অবশ্যই কাযা করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
‘আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।’ [সূরা আল বাকারা:১৮৪]
যে সফরে রোজা ভঙ্গ করা চলে তা হলো একই ধরনের সফর যার কারণে নামাজ কসর করা চলে। কিন্তু যদি মুসাফির ব্যক্তি রোজা রাখে তবে তার রোজা শুদ্ধ হবে।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সফর করতাম। যে ব্যক্তি রোজা রাখত তাকেও তিনি দোষারোপ করতেন না, আবার যে রোজা রাখত না তাকেও দোষারোপ করতেন না।’ (বর্ণনায় বুখারী)
তবে শর্ত হলো রোজা যেন মুসাফিরের জন্য খুব কষ্টকর না হয়। আর যদি রোজা রাখা খুব কষ্টকর হয় অথবা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে রোজা ভঙ্গ করাই উত্তম হবে; কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরাবস্থায় এক রোজাদার ব্যক্তিকে দেখলেন যে প্রচন্ড গরমের কারণে তাকে ছায়া দেয়া হচ্ছে এবং লোকজন তার চারপাশে ভিড় করছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সফর অবস্থায় রোজা রাখা উত্তম কাজের মধ্যে শামিল নয়।’
(বর্ণনায় বুখারী)
গর্ভ ও দুগ্ধদান
গর্ভাবস্থা অথবা দুগ্ধদান অবস্থায় নারী যদি তার ক্ষতির আশঙ্কা করে তবে তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা বৈধ হবে। তবে তাকে কাযা করতে হবে অসুস্থ ব্যক্তির মতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মুসাফির ব্যক্তির উপর থেকে রোজা এবং নামাজের একাংশ উঠিয়ে নিয়েছেন। আর গর্ভধারী ও দুগ্ধদানকারী নারীর ওপর থেকে তিনি রোজা উঠিয়ে নিয়েছেন।’
(বর্ণনায় তিরমিযী)
আর যদি নিজের ক্ষতির কোনো ভয় না থাকে, কিন্তু বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলেও রোজা ভঙ্গ করা বৈধ হবে, তবে তাকে কাযা করতে হবে ও প্রতিদিনের রোজার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করতে হবে।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘দুগ্ধদানকারী ও গর্ভধারী নারী যদি তার সন্তানের ব্যাপারে আশঙ্কা করে তাহলে সে রোজা ভঙ্গ করবে ও মিসকীনকে খাদ্যদান করবে।’
(বর্ণনায় আবু দাউদ)
হায়েয ও নিফাস
যে নারী হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত হয়েছে সে আবশ্যিকভাবে রোজা ভঙ্গ করবে। এ অবস্থায় রোজা রাখা হারাম হবে। এমতাবস্থায় রোজা রাখলে তা শুদ্ধ হবে না। তবে ভাঙ্গা রোজাগুলো পরবর্তীতে কাযা করতে হবে। এর প্রমাণ, আয়েশা রাযি.-কে হায়েযগ্রস্ত নারী রোজা কাযা করবে কি না, এ-ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘বিষয়টি আমাদেরকেও স্পর্শ করত, অতঃপর আমাদেরকে রোজা কাযা করার নির্দেশ দেয়া হত তবে নামাজ কাযা করার নির্দেশ দেয়া হত না।’
(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)