নববর্ষের আনন্দ বাড়িতে বসেই উপভোগ করতে বললেন প্রধানমস্ত্রী
বাংলা নববর্ষের আনন্দ ঘরেই উপভোগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা নববর্ষ ১৪২৭ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশন থেকে একযোগে সম্প্রচার করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই ভাষণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৪২৭ বঙ্গাব্দের নববর্ষের শুভেচ্ছা। দেশে-বিদেশে যে যেখানেই আছেন, সবাইকে জানাই বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ। বাঙালির সর্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ। প্রতিটি বাঙালি আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে থাকেন এই উৎসব। এ বছর বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে পয়লা বৈশাখের বহিরাঙ্গণের সকল অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে বৃহত্তর জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে। কারণ, ইতোমধ্যেই এই ভাইরাস আমাদের দেশেও ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতোপূর্বে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানও জনসমাগম এড়িয়ে রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছে। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানও আমরা একইভাবে উদযাপন করব।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশে এবং প্রবাসে বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকেন। রাজধানীতে রমনা পার্ক, চারুকলা চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নগরীর নানা স্থান মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে এদিনটি। গ্রামীণ মেলা, হালখাতাসহ নানা অনুষ্ঠানে গোটা দেশ মেতে উঠে। এবার সবাইকে অনুরোধ করব কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজসহ নানা মৌসুমি ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন। আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।’
চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাকে ‘চ্যালেঞ্জের’ বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীগণ সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করে একেবারে সামনের কাতারে থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের পেশাটাই এ রকম চ্যালেঞ্জের। এই ক্রান্তিকালে মনোবল হারাবেন না। গোটা দেশবাসী আপনাদের পাশে রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশবাসীর পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। যেসব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনাভাইরাস রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন ইতিমধ্যেই তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।’
‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীর জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে’, বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা। সুরক্ষা সরঞ্জামের কোনো ঘাটতি নেই। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে স্বাস্থ্যকর্মীগণ সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাবেন, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। একই সঙ্গে সাধারণ রোগীরা যাতে কোনোভাবেই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে নজর রাখার জন্য আমি প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিয়োজিত পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী আনা-নেওয়ার কাজে এবং মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীগণসহ জরুরি সেবা কাজে যারা নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ জানান।