‘সরকারের অবহেলায় স্বাস্থ্য খাতে চরম সংকট’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অবহেলায় স্বাস্থ্য খাতে চরম সংকট বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সমস্ত দেশবাসী এখন বৈশ্বিক মহামারী করোনার ভয়ে ভীত এবং মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরীক্ষিতদের মধ্যে করোনা রোগী শনাক্তকরণের হার প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। ঢাকাসহ সারা দেশের ২০ জেলায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের থাবা লক্ষ্য করা গেছে। এই সংকট মোকাবেলায় আমাদের জাতীয় ঐক্য দরকার।’
শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) প্রদানকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) উদ্যোগে পিপিই সরঞ্জাম প্রদান করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস সংকট থেকে দেশের মানুষ যাতে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারে, সে জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সংগঠন দুটি।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আজ এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী– গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার) দেশের ১০ জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন কমপক্ষে ১৫ জন। এমন হিসাব প্রায় প্রতিদিনের। সত্যিকারার্থে জনস্বাস্থ্য নিয়ে এ সরকার কিছুই করেনি। সরকারের মন্ত্রীদের মুখে দেশে উন্নয়নের জোয়ারের খবরে এতদিন দেশ ভেসে গেছে! তা হলে স্বাস্থ্য খাতের এত বেহাল দশা কেন? হাসপাতালে নেই কোনো আধুনিক সরঞ্জামাদি।
‘পরীক্ষা করতে নেই সামগ্রী, রোগ ডায়ালাইসিসের কোনো ব্যবস্থা নেই, তেমন কোনো আইসিইউ নেই, ১৭ কোটি মানুষের জন্য ভেন্টিলেটর আছে মাত্র ১৭০০। হাসপাতালে চিকিৎসক নেই, নার্স নেই। হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে ঢাবি শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের বর্তমানে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, যখন থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে, সরকার তখন থেকেই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেই মেডিকেল সেক্টরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সরকারের অবহেলার কারণেই স্বাস্থ্য খাতে চরম সংকট বিরাজ করছে। এই সংকটের মধ্যেও অনেক চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিবেদিতভাবে কাজ করছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই। যার যার অবস্থানে থেকে সবাইকে সচেতনভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
রিজভী বলেন, আমাদের এই দরিদ্র দেশে এ মুহূর্তে দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল কোটি কোটি মানুষ এখন কর্মহীন। চাল-ডাল জোগাড় করতে তারা যদি সামাজিক দূরত্বের দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসেন, সংক্রমণ প্রতিরোধ তখন অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ ক্ষুধার আক্রমণ করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ওই সব জনগোষ্ঠীর জন্য আপদকালীন সহযোগিতাই পারে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিএনপি বেশ কিছু প্রস্তাবনা জাতির সামনে পেশ করেছে।
অনুষ্ঠানের আয়োজকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও দেশনায়ক তারেক রহমান প্রবাসে। কিন্তু ইতিমধ্যেই তিনি আপনাদের এবং সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীদের এই মহামারী মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। আজকে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এবং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) যৌথভাবে তার ডাকে সাড়া দিয়ে হটলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ দিতে শুরু করেছেন। আপনাদের নির্বাহী পরিচালক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার এ মুহূর্তে অসুস্থ। এ অবস্থায়ও বাকি সহকর্মীরা মিলে বর্তমানে চলমান কর্মসূচিকে আপনারা বর্ধিত আকারে বেগবান করে যাচ্ছেন।
‘বিএনপি তথা মহামারী আক্রান্ত জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই এবং আপনাদের সফলতা কামনা করি। সবাইকে এই মহামারী মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই।’
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তিতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে তার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন রিজভী।