বিশ্বকে উহানবাসীর সতর্কবার্তা
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত চীনের হুবেই প্রদেশের প্রধান শহর উহান থেকে লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়েছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে আসায় গতকাল বুধবার শহরটিতে জারি করা লকডাউন আনুষ্ঠানিকভাবে উঠিয়ে নেওয়া হয়। আড়াই মাসের লকডাউন থেকে বেরিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা। তাদের শহর কর্তৃপক্ষ যে ভুল করেছে, তার থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ভাইরাস সংক্রমণে আড়াই মাস ভয়ানক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছে এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার শহর উহান। পুরো সময়টা বাকি বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে ছিল তারা। তাই লকডাউন উঠে যাওয়ায় দীর্ঘদিন বন্দীদশায় কাটানো উহানের বাসিন্দারা এখন নিজেদের অভিজ্ঞতা বলতে শুরু করেছেন।
উহান শহরে আটকেপড়ারা এখন জানাচ্ছেন লকডাউন পরিস্থিতির কষ্টের অভিজ্ঞতা। তারা স্বীকার করেছেন, প্রথম দিকে তাদের কোনোভাবেই মনে হয়নি রোগটির প্রার্দুভাব এতটা ভয়ংকর হয়ে উঠবে।
একজন নারী বলেন, ‘একটা বড় সময়ের জন্য উহান অবরুদ্ধ ছিল। প্রথম দিকে আমি এ বিষয়ে উদাসীন ছিলাম এবং লকডাউন দরকার বলে মনে করিনি। কিন্তু কিছু দিন পরেই জিনিসপত্রের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিল। চরম ভয় হচ্ছিল এবং আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না।’
যখন হাসপাতালে একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছে, তখন চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য চিকিৎসকরা কীভাবে অনলাইনে আবেদন করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তা জানিয়েছেন আরেকজন নারী।
এক ব্যক্তি বলেন, ‘মাসের পর মাস স্বামী-স্ত্রীর ২৪ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকাটা খুবই বিরল ঘটনা। তখন একজনের ভুল-ত্রুটি আরেকজনের সামনে চলে আসে।’
এ সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে ঝগড়া করা থেকে বিরত থেকে শান্তভাবে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পরামর্শ দেন তিনি।
উহানের আরেকজন নারী বলেন, ‘লকডাউন আপনার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া নয়, এটা একটা সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।’
এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মহামারি থেকে বেরিয়ে এসেছে উহান, সেই সঙ্গে সঙ্গে চীনও। যখন ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন চীন এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসছে।
করোনার প্রকোপে চীনে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছে ৩ হাজার ৩০০-এর বেশি মানুষ। যার অধিকাংশই উহানসহ হুবেই প্রদেশের। এ ছাড়া প্রায় ৮২ হাজার কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে। গত ডিসেম্বর থেকে দেশটিতে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে গত সোমবার প্রথম মৃতের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নামে। যদিও গতকাল দেশটিতে নতুন করে ২ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।