চিকিৎসার টাকা গোপনে বিলিয়ে দিচ্ছেন দম্পতি

স্বামী-স্ত্রী মিলে যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চালান। থাকেন রেলের পরিত্যক্ত জমিতে।  স্ত্রী রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা করানোর জন্য এক লাখের বেশি টাকা জমিয়েছিলেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দিনমজুরদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এসব মানুষ অর্ধাহারে–অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের এই দুরবস্থা দেখে ওই দম্পতি চিকিৎসার জমানো সব টাকা দিয়ে খাদ্যসামগ্রী কিনে দিনমজুরদের মধ্যে বিলিয়ে দিচ্ছেন।

এই মহতি উদ্যোগ নিয়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা সদরের ওই দম্পতি। তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ যদি উপকৃত হয়, তাহলে তারা স্বস্তি পাবেন।

এ বিষয়ে ওই দম্পতি জানান, একদম সাধারণ শ্রেণির মানুষ তারা। স্বামী একটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। স্ত্রী আনসার-ভিডিপির ওয়ার্ড পর্যায়ের দলনেতা। দুই সন্তানের একজন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ও অন্যজন স্থানীয় এক মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। পৈতৃক সূত্রে তারা কোনো সম্পদ ও জমি পাননি। তাই রেলের পরিত্যক্ত জমিতে ঘর তুলে বসবাস করেন। তাদের দুজনের উপার্জনে কোনোরকম দিন চলে যায়।

স্ত্রী হৃদ্রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া তার কিডনি ও মেরুদণ্ডে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। একবার তিনি ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন। চিকিৎসক মার্চের শুরুতে আবার যেতে বলেছিলেন। সে জন্য এক লাখের কিছু বেশি টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ায় ভারতে লকডাউন চলছে। এই পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের উপার্জনও বন্ধ। কয়েক সপ্তাহ ধরে কাজ না থাকায় দরিদ্র পরিবারের লোকজন নিত্যপণ্য কিনতে পারছেন না। অনেক পরিবার অর্ধাহারে–অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা পরামর্শ করে এসব মানুষকে সহায়তা করার উদ্যোগে নেন।

ওই দম্পতি আরও জানান, চিকিৎসার টাকা তো এখন কাজে লাগছে না। তাছাড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস তো সবকিছু ওলট–পালট করে দিতে পারে। তাই এ টাকা তারা দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দেওয়ার কাজে লাগাবেন বলে পরিকল্পনা করেন। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সম্প্রতি বাজারে গিয়ে চাল, ডাল, সাবান ও শাকসবজি কিনে এনেছেন। বাড়িতে বসে তারা সারা দিন প্যাকেট করেন। সন্ধ্যার পর অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেগুলো বিতরণ করেন।

পরিচিত মানুষগুলো তাদের এই কাজের কথা জেনে যাতে হাসি–ঠাট্টা না করে, সে জন্য তারা তাদের পরিচয় তুলে ধরতে চান না। তাদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছেন, এমন এক ব্যক্তির মাধ্যমে দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে স্ত্রী বলেন, ‘পেটের ক্ষুধার বড় যন্ত্রণা। সংসারের প্রথম জীবনে আমরাও অনেক দিন না খেয়ে দিন পার করেছি। তাই চিকিৎসার চাইতে গরিবের ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটানো আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বেঁচে থাকলে হয়তো চিকিৎসা পরেও করতে পারব।’

বাগাতিপাড়া বাজার মোড়ের ভ্যানচালক তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘অনেক মানুষের চাইতে উনারা (দম্পতি) তো গরিব মানুষ। তবু তারা আমার মতো মানুষের কথা ভাবেন। গোপনে চাল-ডাল দেন। আল্লাহ ওদের ভালো করুন।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ