২৫ মার্চ: সেই কালো রাত

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। মানবেতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় সেই কালো রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী মেতেছিল জান্তব উল্লাসে। ঢাকা শহর হয়েছিল ধ্বংসস্তূপ। রাতটি ছিল ভয়াবহতম একটি রাত।

‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে বাঙালির জাতীয়তাবাদী, স্বাধিকার আন্দোলনকে সশস্ত্র হামলার দ্বারা দমন করতে চেয়েছিল নরপশুরা।

ইতিহাসের বিবরণ অনুযায়ী, ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মার্চের শুরুতে ১৪তম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করেন। এদের পেছনে ছিলেন জেনারেল গুল হাসান। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েতা হতে ১৬তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন এবং খরিয়ান থেকে ১৯তম ডিভিশনকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার আদেশ দেয়া হয়।

২৫শে মার্চে গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে নিরস্ত্র মানুষের উপর সামরিক আক্রমণের জন্য কুখ্যাত এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার জ্বলন্ত সাক্ষী। ২৫শে মার্চের ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যেও ফিনিক্স পাখির মতো বাঙালি জাতির উত্থান ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে হানাদারদের পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল ও ঐতিহাসিক গৌরবের।

২৫শে মার্চের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিক পর্যায়গুলো। বছরের পর বছর তীব্র গণআন্দোলন শেষে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর বাঙালিরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিল যে ক্ষমতার পালাবদল হবে এবং আওয়ামী লীগ ৬ দফা অনুসারে সরকার গঠন করবে। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ এ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খান পিপিপি’র জুলফিকার আলি ভুট্টোর প্ররোচনা ও চাপে জাতীয় সংসদের কার্যাবলী মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।

ভয়াল ২৫ শে মার্চ-কালো রাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ এর মধ্যে থেকে আমরা মানে জাতি বিভীষিকাময় আধার পরিস্থিতি থেকে আলোর দেখা পেল। সে ঘোষণা শুনে তরুণ-বৃদ্ধ-যুবক-কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-শিক্ষক-নর-নারী তথা আপামর জনসাধারণ; যে যার অবস্থান থেকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ