চিকিৎসার নামে আটকে রেখে তরুণীকে ধর্ষণ
ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসার নামে ১৭ মাস ধরে আটকে রেখে ১৯ বছরের তরুণীকে ধর্ষণের করার অভিযোগে সিলেটের বিশ্বনাথে এক ভন্ড কবিরাজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে স্ত্রীসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মা-বাবার কাছ মেয়েকে চিকিৎসার নামে আটকে রেখে ধর্ষণ করার অভিযোগ পেয়ে ওই রাতেই উপজেলার পুরাণ বাজার এলাকাস্থ ভন্ড কবিরাজের ভাড়াটিয়া বাসা থেকে তালাবন্দি অবস্থায় নির্যাতিতা তরুণীকে উদ্ধার করে।
তরুণীকে উদ্ধারের পর ভন্ড কবিরাজ কমরুদ্দিন ওরফে চান মিয়া ও তার স্ত্রী সুমি বেগমকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতা তরুণীর মা।
জানা যায়, গ্রেফতার হওয়া ভন্ড কবিরাজ কমরুদ্দিন বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মৃত ইউনুছ আলীর পুত্র। আর দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার পুরাণ বাজারস্থ (শরীষপুর) এলাকার আছদ্দর আলী ম্যানশনে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। ভন্ড ওই কবিরাজ সে বাসাতেই ‘সিফা তদবিরালয়’ নামে একটি রমরমা কবিরাজি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কবিরাজি করার নামে সে মূলত কিশোরী ও তরুণীদেরকে নিজ বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করত। আর ভন্ড কবিরাজকে তার এসব অসামাজিক কাজগুলোতে সহযোগিতা করত তার স্ত্রী।
তরুণীর মা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, নানা রকমের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত তার বড় মেয়েকে (নির্যাতিতা তরুণী) সুস্থ করতে চিকিৎসার জন্য প্রায় ১৭ মাস পূর্বে কবিরাজ কমরুদ্দিনের শরণাপন্ন হন। এসময় ভন্ড কবিরাজ তাকে জানায় চিকিৎসার প্রয়োজনে তার মেয়েকে ৩ মাসের জন্য ওই ভন্ড কবিরাজের কাছে রেখে যেতে হবে এবং চিকিৎসার জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। ভন্ডের কথামত তরুণীর মা টাকা পরিশোধ করে মেয়েকে সুস্থ করার জন্য তার কাছে নির্যাতিতা তরুণীকে রেখে যান। ৩ মাস পর মেয়েকে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যে সিফা তদবিরালয়ে যাওয়ার পরই ঘটে বিপত্তি। এসময় ভন্ড কবিরাজ তার মেয়েকে ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং উল্টো তাকে নানা রকমের হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি দেখায়। এভাবে প্রায় দেড় বছর ধরেই সিফা তদবিরালয়ে মধ্যে তালাবন্দী করে আটকে রেখেছে তার মেয়েকে (নির্যাতিতা তরুণীকে)। আর মেয়েকে হারিয়ে ফেলতে পারেন এমন ভয় থেকে এ ব্যাপারে তিনি কাউকে কিছু বলার সাহস পাইনি।
অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাতে মেয়েকে উদ্ধারে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতার জন্য স্বামীকে সাথে নিয়ে উপজেলার পুরাণ বাজারস্থ প্রেসক্লাব কার্যালয়ে যান তিনি। এসময় প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ থানা পুলিশের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এরপর পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে তরুণীকে উদ্ধার করে ও সস্ত্রীক ভন্ড কবিরাজকে গ্রেপ্তার করে।
থানা পুলিশ সূত্র জানা গেছে, উদ্ধারের পর তরুণী পুলিশকে জানিয়েছে ভন্ড কবিরাজ কমরুদ্দিন চিকিৎসার নামে প্রথম থেকে তরুণীর সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। তাকে দিনরাত ঘরের ভেতর তালাবন্দি করে আটকে রাখত। কোথাও বের হতে দিত না। সম্প্রতি কমরুদ্দিন ভুয়া বিয়ের কাগজ তৈরী করে নির্যাতিতা তরুণীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেছিল।
নির্যাতিতা তরুণীকে উদ্ধার, এ ব্যাপারে তরুণীর মায়ের মামলা দায়ের করা ও সস্ত্রীক ভন্ড কবিরাজ কমরুদ্দিনকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেন বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুসা। তিনি বলেন, কোন ধরনের অপকর্মের সাথে আপোষ করবে না থানা পুলিশ। অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আসতে হবেই।